বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য আলাদা পোস্টার ও স্লোগান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের স্লোগান-বাঁচতে চাই পড়তে চাই, দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। পোস্টারে বড় করে দেওয়া হয়েছে রাজু ভাস্কর্যের ছবি। ভাস্কর্যের মূল সাদা রঙের পরিবর্তে পোস্টারে হালকা গোলাপী রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে এই পোস্টারের মোড়ক উন্মোচিত হয়।
বিএনপির এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির বিরুদ্ধে মূর্ত প্রতীক সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য। শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের দখলবাজির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শহীদ হন মঈন হোসেন রাজু। সন্ত্রাসী ধারার দুটি (ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল) ছাত্র সংগঠনের গোলাগুলির মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে ধরে রাজু আওয়াজ তুলেছিলেন ‘অস্ত্র শিক্ষা একসঙ্গে চলে না’। সেই সন্ত্রাসী ধারার রাজনৈতিক কোনও শক্তি তাদের পোস্টারে বা অন্যকোনও প্রচারপত্রে রাজু ভাস্কর্যের ছবি ব্যবহার করলে এক বাক্যে বলতে চাই ‘তারা ভণ্ড’।
এই পোস্টারের চিন্তা কেমন করে এলো— জানতে চাইলে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা আমরা করিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে। আমরা এটি জানি না। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটি বলতে পারবে।
অনেকটা দপ্তর সম্পাদকের কাছাকাছি মন্তব্য করেন ছাত্রদলের প্রথম সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট। তিনি বলেন, পোস্টারের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানি না। কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি এ বিষয়ে জানাতে পারবে।
পরে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, চিন্তাটা আমি একা করিনি। অনেকের সঙ্গে কথা বলে ও পরামর্শ নিয়েই করেছি।
এ প্রসঙ্গে বাকী বিল্লাহ বলেন, রাজু ও সন্ত্রাসবিরোধী চেতনার প্রতি এটা চরম অবমাননা। গণবিরোধী ও সন্ত্রাসী রাজনীতিকে পরিত্যাগ করতে পারলেই তারা এই চেতনা ধারণ করার যোগ্য বিবেচিত হবেন। সাম্প্রতিক অতীতেও যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে; যাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে নিক্ষিপ্ত বুলেট মায়ের পেটের শিশুকে বিদ্ধ করেছে- রাজু ভাস্কর্য তাদেরকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মূলত থিমটা এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভেবে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অতুলনীয়। গণতন্ত্রের ঐতিহ্য রক্ষায় তারা বরাবর ভূমিকা রেখেছেন। এ কারণেই আন্দোলনের কথা চিন্তা করে, গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করে রাজু ভাস্কর্যের ছবিটি পোস্টারে দিয়েছি। এখন তো শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নেই। রাজনীতি নেই। সবসময় প্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক লেগে থাকে।
প্রচার উপ-কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ নিয়ে মন্তব্য নেই।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, রাজুসহ সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের সব শহীদের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি ১৯৯৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নির্মাণে জড়িত ছিলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী ও সহযোগী গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনে অর্থায়নে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি, লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
ছাত্র ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের যে কোনও দাবি নিয়ে সমাবেশ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এখন রাজু ভাস্কর্যের সামনেই আয়োজন হয়ে থাকে।
জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তারের সঙ্গে। তিনি ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পোস্টার সংখ্যার বিষয়ে প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, কাউন্সিল উপলক্ষে সর্বমোট ৬ লাখ পোস্টার করা হয়েছে। এগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হবে। তিনি বলেন, এখন প্রচারের যতগুলো মাধ্যম তাতে করে পোস্টারের প্রয়োজন পড়ে না। তবে রীতি ও ঐতিহ্য মানতে গিয়েই করা।
ছাত্রদল দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে পোস্টার লাগানো শুরু হবে। ইতোমধ্যে ছাপাখানা থেকে পোস্টার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
/এসটিএস/এএ/এএইচ/এপিএইচ/এজে