ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছরে দ্বন্দ্ব-বিরোধ চরমে

দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন'। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংগঠনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতিষ্ঠার ৬৯তম বছরে এসে ভাঙনের মুখে পড়েছে সংগঠনটি। ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি এই হয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে সংগঠনটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক তামজীদ হায়দার চঞ্চল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি রাগিব নাঈমসহ গঠিত বিদ্রোহী অংশ গত ১২ এপ্রিল জরুরি সম্মেলন ঢেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করে। নতুন কমিটিকে ঐক্যের কমিটি আখ্যা দেন বিদ্রোহী অংশের সদস্য রাগিব নাঈম। যদিও এই কমিটিকে অস্বীকার করে সম্মেলনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান মূল অংশের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ।

১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল ‘পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনে অবিভক্ত পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের অর্থনীতি, সমাজচেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আলাদা হওয়ায় শুধু পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সংগঠনটির নাম করণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’। স্বাধীনতার পরে সংগঠনটির নাম ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন’ রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। শ্রমিক শোষণের বিরোধিতা, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সংগঠনটি। এসব গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের জন্য সুশীল সমাজের কাছে প্রশংসা পেয়ে আসছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র ইউনিয়নের বিবদমান দুইপক্ষই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মূল অংশ সোমবার দুপুরে কদম ফোয়ারা থেকে র‌্যালি নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ করে। অন্যদিকে বিরোধী অংশ বিকালে মিছিল ও সন্ধ্যায় ফানুস উড়াবে বলে জানা গেছে।

বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, সংগঠনের ভেতরে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। তার মানে এই নয় যে, সংগঠন বিভক্ত। এই আলোচনা সমালোচনা সামনে অগ্রসর হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা রাখে। আমরা সামনে একসঙ্গে এগিয়ে যাবো।

তবে বিরোধী অংশের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাগিব নাঈম বলেন, দ্বন্দ্ব সবসময় ছিল, সামনের দিনেও থাকবে। দ্বন্দ্ব না থাকলে তো প্রগ্রেস হবে না। ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়ন না হলে হয়তো দ্বন্দ্ব থাকতো না। ছাত্র ইউনিয়নের চার মূলনীতির প্রথমটি হচ্ছে ঐক্য। আর দ্বন্দ্ব মানে যে বিভাজন, আমি বিষয়টা এমন মনে করি না। দ্বন্দ্ব থাকবে, সেইসঙ্গে সবাই একসঙ্গে কাজ করে সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

গত ১২ এপ্রিল বিদ্রোহী অংশের নতুন কমিটি কি মূল কমিটি থেকে আলাদা? - এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ১২ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়নের কোনও কোরামের সম্মেলন ছিলে না। যদি কোনও জরুরি সম্মেলন করতে হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদের অনুমোদন লাগে। সেখানে এ ধরনের কোনও নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। আর ছাত্র ইউনিয়নের গঠনতন্ত্র যেটাকে অনুমোদন করে না, সেটা কখনোই ছাত্র ইউনিয়নের প্রোগ্রাম হতে পারে না।

বিরোধী অংশের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাগিব নাঈম বলেন, না দুটো আলাদা অংশ নয়। ১২ এপ্রিল যে সম্মেলন হয়েছিল, তার মূল বক্তব্য হলো ঐক্য দৃঢ় করা। ওইদিনের সম্মেলন আসলে বিভাজনের সম্মেলন না। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য সুদৃঢ় করার চেষ্টার অংশ ছিল ওই সম্মেলন।