বিদায়বেলায় নিজের ব্যাপারে নয়, ভিএফবিকে নিয়েই কথা বলেছেন জার্মানির হয়ে ৭৮ ম্যাচ খেলা স্ট্রাইকার। ‘ভিএফবিকে নিয়ে এটাই ছিল আমার শেষ অভিযাত্রা। আমি সবসময় এখানেই আমার ক্যারিয়ার শেষ করার স্বপ্ন দেখে এসেছি’-বিবিসি তাকে উদ্ধৃত করেছে এভাবেই।
অন্য কোনও লিগে খেললে হয়তো ক্যারিয়ারটা আরেকটু লম্বা হতে পারতো। ইচ্ছে করলে খেলতে পারতেন কম শারীরিক চাহিদাসম্পন্ন কোনও লিগে। সেদিকে আর গেলেন না। জার্মানিতে সাধারণত ৩০ পেরোলেই ফুটবলাররা, বিশেষ করে আউটফিল্ড খেলোয়াড়েরা বিদায়ের কথা ভাবেন। গোমেজ ৩৪ বছর বয়সেই বুটজোড়া চিরদিনের জন্য ঝুলিয়ে রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।
বাবা স্প্যানিশ। মা জার্মান। স্পেন-জার্মানি দুই দেশেরই পাসপোর্টধারী। চেষ্টা করলে স্পেনের হয়েও হয়তো খেলতে পারতেন। বেছে নিয়েছিলেন জার্মানিকেই। জার্মানির জার্সিতে অভিষেক ২০০৭ সালে। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে ৩১ গোল- এই পরিসংখ্যান দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার হিসেবে তাকে পরিচিতি দেয় না। তবে ৬ ফুট ২ ইঞ্চির বিশালাকার শরীর নিয়ে যখন প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকতেন, প্রতিপক্ষ তটস্থই থাকতো। দৃশ্যত অসম্ভব জায়গা থেকে গোল করতে পারতেন। হেডে দক্ষতা ছিল অসাধারণ। গোমেজ ছিলেন সেই গোত্রের স্ট্রাইকার যাদের বলা হয়, ‘ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে থাকা স্ট্রাইকার।’
২০০৬-২০০৭ মৌসুমে ১৪ গোল ও সাতটি গোলে সহায়তা করে ভিএফবি স্টুটগার্টকে চ্যাম্পিয়ন করেন বুন্দেসলিগায়। জার্মানির বর্ষসেরা ফুটবলারও নির্বাচিত হন সেবার। তবে জার্মানিতে একটা কথা খুব চালু যে, বায়ার্ন মিউনিখে না খেললে কোনও খেলোয়াড়ই নিজেকে যেন সেরা বলে ভাবতে পারেন না। ২০০৯ সালে যোগ দেন জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্নে। দুই বছর ছিলেন সেখানে, ফ্রাঙ্ক রিবেরি ও আরিয়েন রোবেনের সঙ্গে গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর এক আক্রমণভাগ। এর পরে চলে যান ইতালির ফিওরেন্তিনায়। সেখান থেকে ধারে তুরস্কের বেসিকতাসে। অত:পর ভলফসবুর্গ হয়ে থামলেন স্টুটগার্টে। এর মাঝে অবশ্য ফুটবলারদের ‘চিরশত্রু’ চোটের সঙ্গে অনেকবারই সখ্য হয়েছে। না হলে হয়তো ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলতে পারতেন। এবং একটি বিশ্বকাপ মেডেল পারতেন ঝোলাতে গলায়। এই দু:খ তার কোনওকালেই যাবে না। আর যে দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন তা থেকেও অবশ্য ওই মেডেল গলায় পরার আশা ছিল। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে শিরোপার আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত তৃতীয় স্থান জোটে জার্মানির। আর ২০১৮ বিশ্বকাপ তো বিস্মরণযোগ্য, টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের অভিযান শেষ হয় গ্লানিতে, প্রথম রাউন্ডেই বিদায়। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন। তার প্রায় দুবছর বাদে এদিন ফুটবলকেই রেখে দিলেন স্মৃতির সিন্দুকে।
তবে গোমেজের স্মৃতিটা জার্মান ফুটবলে সহজেই মুছে ফেলা যাবে না। তার নাম উচ্চারিত হলেই মনে পড়বে একটি উড়ন্ত দীর্ঘ শরীর, প্রতিপক্ষের বক্সে সব মাথা ছাড়িয়ে যিনি হেডে গোল করে দুহাতের মুঠো পাকিয়ে ভাসছেন উচ্ছ্বাসে।