স্মিথ বলছেন, ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে

গ্রায়েম স্মিথ১১ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। দেশের ইতিহাসের তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসেরই সবচেয়ে সফল অধিনায়ক (৫০ টেস্টজয়ী একমাত্র অধিনায়ক)। দেশের ক্রিকেটের টালমাটাল পরিস্থিতিতে গত ডিসেম্বরে তাকে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) ক্রিকেট পরিচালক (ডিরেক্টর অব ক্রিকেট) নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রায়েম স্মিথের মনে হচ্ছে, এ দায়িত্বে না এসে ধারাভাষ্যকারের জীবনেই ভালো ছিলেন। তার উপলব্ধি, সিএসএর ভেতরকার একটি চক্রের স্বার্থের খেলা চলছে যা ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

স্মিথ ইঙ্গিত দিয়েছেন, বড় পদে থাকা কয়েকজন ব্যক্তির কারণে সিএসএ’র সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং তারাই সংবাদমাধ্যমে তথ্য ফাঁস করে অভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি করছেন। ‘আমার মনে হয় অনেক আগে থেকেই সংস্থার মধ্যে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে’- দক্ষিণ আফ্রিকার অনলাইন পোর্টাল নিউজ২৪ ডট কম এক প্রতিবেদনে এভাবে উদ্ধৃত করেছে স্মিথকে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাবাং মোরোয়েকে বহিষ্কার করার পর গত ডিসেম্বরে ১১৭ টেস্ট খেলা সাবেক এই ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সিএসএ। চুক্তিটি দুই বছর মেয়াদের যা তৃতীয় দফা পর্যন্ত পরিবর্ধনযোগ্য। স্মিথ মনে করেন সিএসএর ভেতরেই বড় পদে থাকা কিছু লোক ভবিষ্যতের জন্য খারাপ উদ্দেশ্যে সংবাদমাধ্যমে তথ্য ফাঁস করে চলেছেন।

সিএসএ’র কৃষ্ণাঙ্গ সভাপতি ক্রিস নেনজানিও অবশ্য স্মিথের এমন দাবির সঙ্গে একমত। নিউজ২৪ নেনজানিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে তিনিও এটি জানেন এবং এটি ‘গত ১৮ মাস ধরে সংগঠনের মধ্যে চলে আসছে’ এবং এটি ‘অনেকের ক্ষতি করেছে’ বলে তিনিও বোর্ডে এ ব্যাপারে তার অসন্তোষ জানিয়েছেন আগেই।

আসল ঘটনা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ পেসার লুঙ্গি এনগিডির ডাকে সাড়া দিয়ে যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (কালো মানুষের জীবনেরও দাম আছে) আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতেই আবার অশান্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট।

প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে গ্রায়েম স্মিথ ও প্রধান কোচ হিসেবে মার্ক প্রক্রিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। রবিবার ৪০ জন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটারের একটি দল বোর্ডের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছে, বোর্ডে সমতার ভিত্তিতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। সাবেক নির্বাচক হুসেইন মানাকের দাবি, প্রধান কোচের শ্বেতাঙ্গ সহকারী জ্যাক ক্যালিস বা পল হ্যারিসের চেয়ে অন্য কৃষ্ণাঙ্গ সহকারী যেমন শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট বা জাস্টিন অনটংরা কম বেতন পান।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১১৭ টেস্ট খেলে ৯২৬৫ রান করা স্মিথ দাবি করেছেন, তার এবং মার্ক বাউচারসহ অন্য স্টাফ নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হচ্ছে তা খুবই অন্যায়। ‘সিএসএ অনেক আগে থেকেই আমাকে বলে আসছিল, অন্য যে কেউ চাকরি পাওয়ার জন্য যেমন ইন্টারভিউ দেয়, আমিও তা দিয়েছি। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ ক্রিকেটটা আমি অন্তরে ধারণ করি এবং সমস্যা সমাধানের জন্যই আমাকে আনা। আমি সিএসএকে শক্তিশালী করে তুলতে চাই।’

সিএসএ সভাপতি এনজানিও অবশ্য স্মিথের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সবরকম আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ৩৯ বছর বয়সী সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, কোনও নিয়োগেই অস্বচ্ছতা নেই।