বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নওশেরকে শেষ বিদায়

নওশেরুজ্জামানের বিদায় বেলায় তাকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), সোনালি অতীত ও ওয়ান্ডারার্স।বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) ক্যারিয়ারের একটা বড় সময় কেটেছে নওশেরুজ্জামানের। এই মাঠে রয়েছে তার অনেক কীর্তি- হোক সেটা জাতীয় দল কিংবা ক্লাব। সব খানেই ছিল তার সমান আধিপত্য। এমনকি ক্রিকেটেও ছিলেন পারদর্শী। যে মাঠে তার এতসব কীর্তি, সেখানেই আজ শেষ বিদায় জানানো হলো নওশেরুজ্জামানকে। এসময় হাজির হয়েছিলেন তার সাবেক সতীর্থরাও।

আগের দিন(সোমবার) রাতেই ইহজগত থেকে চিরবিদায় নেন নওশেরুজ্জামান। করোনাভাইরাসের ছোবলে সপ্তাহখানেক লাইফসাপোর্টে ছিলেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে ওপারের ডাক থেকে নিজেকে আর ফিরিয়ে আনতে পারেননি। 
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই সদস্যের বিদায় বেলায় ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), সোনালি অতীত ও ওয়ান্ডারার্সসহ আরও অনেকেই।

সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপক্ষো করেই নওশেরুজ্জামানকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হয়েছিলেন মোহামেডানে তারই সতীর্থ ফুটবলার আব্দুল গাফফার। শোকাতুর হৃদয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেছেন, ‘নওশের ভাই ৭০ দশকের নামী খেলোয়াড় ছিলেন। খেলেছেন ঢাকা মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স ও ফায়ার সার্ভিসের মতো দলে। এছাড়া স্বাধীন বাংলা দলেরও খেলোয়াড় ছিলেন। তার সঙ্গে আমার খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে মোহামেডানে খেলেছি, আগা খান গোল্ডকাপে। এছাড়া আরও দুই বছর খেলেছি মোহামেডানে। তিনি একজন ভালো ফুটবলার ছিলেন। এভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নওশের ভাই চলে যাবেন, তা ভাবতেই পারেননি।’

স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল সোচ্চার ভূমিকা রাখলেও তাদের এখনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি। গাফফার তাই আফসোস করে বলছিলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল স্বীকৃতি পায়নি, এ নিয়ে তার আক্ষেপ ছিল। আর সেটি না দেখেই তাকে চলে যেতে হলো।’

নওশেরুজ্জামানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, স্বাধীন বাংলা দলের আরেক সদস্য আব্দুস সাত্তার। প্রিয় সতীর্থের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন তিনি, ‘ভারতের ক্যাম্পে আমরা এক সঙ্গে ছিলাম। নওশের ভাই সবাইকে উৎসাহ দিতেন। বেশ হাসি-খুশি মানুষ ছিলেন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জন্য তার অবদান অনেক। তার এই অবদান ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি সবসময় আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন। সবসময় সহযোগিতা করতেন। এই মাঠে উনি খেলে গেছেন, আর এই মাঠেই তার জানাজা হচ্ছে।ভাবতেই খারাপ লাগছে।’

স্বাধীন বাংলা দলের ক্যাম্প কমান্ডার ও নওশেরুজ্জামানের বড় ভাই বদিউজ্জামানও ফিরে গেলেন অতীতে, ‘আমরা সাত ভাইয়ের মধ্যে ছয়জনই ফুটবল খেলেছি। নওশের এর মধ্যে অন্যতম ছিল। ঢাকার মাঠে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২২ গোল করার রেকর্ড আছে ওর। এছাড়া ক্রিকেটেও সে পারদর্শী ছিল।’

নওশেরুজ্জামানের একমাত্র ছেলে মইনুজ্জামান রূপম আমেরিকা প্রবাসী। তিনি জানাজায় অংশ নিয়ে বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, ‘বাবা অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় ছিলেন। তার খেলা আমার দেখা হয়নি। আসলে বাবাকে হারানোর শোক ভোলার নয়। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’

ঢাকার পর মুন্সিগঞ্জে হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে তৃতীয় জানাজা শেষে সেখানেই সমাহিত হবেন নওশেরুজ্জামান।