স্বপ্নের তুলিতে আঁকা শ্রাবসোলের সাফল্যের ছবি

অ্যানিয়া শ্রাবসোল‘কত সুন্দর জায়গা! ইস, আমি যদি এখানে খেলতে পারতাম…। ইংল্যান্ডের জন্য… একটি বিশ্বকাপ ফাইনালে’- ১৫ বছর আগে কথাগুলো যখন বলেছিলেন, স্বপ্নটাই কেবল সঙ্গী ছিল ছোট্ট এক শিশুর। সত্যি স্বপ্ন মানুষকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে!  ১০ বছর বয়সে প্রথমবার লর্ডসে বাবা ইয়ানের ক্লাব ফাইনাল দেখার মাঝে নিজের স্বপ্নটাও বুনেছিলেন অ্যানিয়া শ্রাবসোল। যেটা বাস্তবে রূপ দিলেন রবিবার। শুধু তাই নয়; ফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ তো হয়েছেই, সেটাকে আরও রাঙিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ের রঙিন ক্যানভাসে শেষ তুলির আঁচড়টাও দিয়েছেন এই পেসার।

শ্রাবসোলের অসাধারণ বোলিংয়ে ভারতীয়দের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে ইংল্যান্ড। ২০০৯ সালের পর ক্রিকেটের পুণ্যভূমিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল তারা। এ সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব বাঁহাতি পেসারের। হারটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হলেও ভারত আসলে হেরেছে এই পেসারের কাছেই। ৪৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তো তিনিই। ইংলিশদের মাত্র ২২৮ রানে আটকে দিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর দলটি ২৫ বছর বয়সীর এই পেসারের বোলিং আগুনে পুড়ে হয় খাক।

সতীর্থদের আলিঙ্গনে শ্রাবসোল২০০১ সালে প্রথমবার লর্ডসে এসে দেখা স্বপ্ন শ্রাবসোল পূরণ করেন ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে গায়েকোয়ারকে বোল্ড করে। শেষ কাঁটা দূর করে আবেগের স্রোতে ভেসে যাননি, বরং ছিলেন শান্ত পুকুরের মতো। দুহাত ছড়িয়ে করে আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো বললেন ‘ঈশ্বর, তোমাকে ধন্যবাদ।’ সতীর্থরা তার লাগাম দেওয়া উদযাপনে বাধ সাধেননি। নিজের মতো করে উদযাপন করতে সময় দিয়েছিলেন তাকে। যখন সবাই তাকে ঘিরে ধরল, তখনও যেন ঘোরের মধ্যে ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী।

ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সময়ও শ্রাবসোল বুঝতে পারছিলেন না ‘কী হলো’। কোনও রাখঢাক না রেখে তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি। এককথায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার এটা। সত্যিই গর্ব করার মতো।’

শেষ বাধা দূর করে শ্রাবসোলের উল্লাসদলের সফলতার মূলমন্ত্রও জানালেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়, ‘আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিলাম। এই দলটির সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা কখনও আশা হারাই না। উইকেট পাচ্ছিলাম না, তারপরও রান রেটকে বেশিদূর এগোতে দেইনি। জানতাম যদি দুই-তিনটি উইকেট পাই, তাহলে ম্যাচে ফিরতে পারব এবং শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালো হলো। আমি মনে করি এটা একটা স্বপ্ন, যে স্বপ্ন সত্যি হবে বলে কখনও ভাবিনি।’

স্বপ্নের শিরোপা হাতে শ্রাবসোলস্বপ্নটা অবিশ্বাস্যভাবে পূরণ হয়েছে শ্রাবসোলের। শুধু তাই নয়, যেন তার হাত ধরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্ম। লর্ডস ফাইনালে এমন অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখে হয়তো এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্মের কোনও শিশু, তার মনের অজান্তেই বেজে উঠছে, ‘বড় হয়ে আমি আনিয়া শ্রাবসোলের মতো হতে চাই।’ যে স্বপ্নের বীজ ১৫-১৬ বছর আগে বুনেছিলেন শ্রাবসোল, সেটা যেন লর্ডসের ফাইনাল জয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেন আগামী প্রজন্মের মাঝে। ক্রিকইনফো, স্কাইস্পোর্টস, ইন্ডিপেনডেন্ট

/এফএইচএম/কেআর/