তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশের ‘টেস্ট’

dc-Cover-28vg24u6bdvcrtrt0bvc4kij07-20160304194426.Mediটেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তার। অবশ্য শুধু রান দিয়ে তামিম ইকবালের ব্যাটিং সামর্থ্য তুলে ধরা কঠিন।

ব্যাটিংয়ে বর্তমান বাংলাদেশ দলের নির্ভরতার প্রতীক তিনি। গত কয়েক বছর ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফরম করে বাংলাদেশের সাফল্যের পথটা করেছেন চওড়া। সেই তাকে ছাড়া টেস্টে খেলতে নামলে অধিনায়কের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ তো পড়বেই!

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তার মেঘ উড়াউড়ি করছে তামিমকে ঘিরে। তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রিত একাদশের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই পড়লেন চোটে। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার পর স্ক্যানে জানা গেল পায়ের পেশিতে টান পড়েছে তার। তাতে অনিশ্চয়তার পর্দা পড়ে তামিমের প্রথম টেস্ট খেলা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শঙ্কার মেঘ কেটে তামিম মাঠে নেমেছিলেন। যদিও বড্ড তাড়াতাড়িই করে ফেলেছিলেন তিনি। বিষয়টা বোঝা যাচ্ছে এখন, যখন জানা গেছে পুরানো ওই চোটটা নতুন করে ফিরে এসেছে আবার। যার খেসারত হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্লুমফন্টেইনের দ্বিতীয় টেস্টে নেই বাংলাদেশের সেরা এই ওপেনার।

২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর তৃতীয়বার ঘটছে এমনটা, যেখানে বাংলাদেশকে টেস্টে খেলতে হচ্ছে তাকে ছাড়া। হার-জিত কিংবা ড্র, তামিম বরাবরই সামলেছেন ওপেনিংয়ের দায়িত্ব। পায়ের চোটটা এবার বাধা হয়ে দাঁড়ালো তার সামনে। ২০১৩ সালের পর আবারও টেস্ট মিস করছেন এই ওপেনার। ওই বছরই দুবার খেলতে পারেননি তিনি পাঁচ দিনের ম্যাচ। প্রথমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, পরে জিম্বাবুয়ে সফরে।

অভিষেকের পর প্রথমবার কোনও টেস্ট মিস হয় তামিমের ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গলের ওই টেস্টে তামিমের অভাবটা অবশ্য টের পায়নি টাইগাররা। তিনি না থাকলেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরির (২০০) সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেছিলেন ১৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তাদের সঙ্গে নাসির হোসেনের (১০০) সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে করেছিল ৬৩৮ রান। শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে ৫৭০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয় ইনিংসও ঘোষণা করেছিল ৪ উইকেটে ৩৩৫ রানে। মাঝে বাংলাদেশের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে গল টেস্ট এমনিতেই এগোচ্ছিল ড্রয়ের দিকে। শেষ পর্যন্ত টাইগাররা ১ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান করার পর ড্রতে শেষ হয় ম্যাচটি।

এমন পারফরম্যান্সের পর জোর দিয়েই বলা যায় তামিমের না থাকাটা ওই ম্যাচে প্রভাব ফেলেনি একেবারেই। শুধু তামিম নন, গলের ওই টেস্টে ছিলেন না সাকিব আল হাসানও! ২০১৩ সালের পর ব্লুমফন্টেইনে আবারও বাংলাদেশ নামতে যাচ্ছে দলের সেরা দুই খেলোয়াড়কে ছাড়া।

ওই ২০১৩ সালেই তামিমকে ছাড়া আবারও টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে এই ওপেনারকে ছাড়া অবশ্য ভুগতে হয়েছিল খুব। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচটি হেরেছিল সফরকারীরা ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৮৯ রানের পর বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে করেছিল মাত্র ১৩৫ রান। পরে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে ২২৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয় মুশফিকদের, এবার ১৪৭ রানে গুটিয়ে গিয়ে বড় হার নিয়ে ছাড়তে হয় মাঠ। দ্বিতীয় টেস্টে তামিম ফিরলে বাংলাদেশও ফেরে জয়ে। স্বাগতিকদের হারিয়েছিল ওই ম্যাচে ১৪৩ রানে।

চার বছর পর আবারও তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশের পরীক্ষা। সাকিবের অভাবটাই কাটাতে পারেনি পচেফস্ট্রুমে, সেখানে তামিমের না থাকাটা যে দলের জন্য বড় ধাক্কা, সেটা বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলে গেছেন অধিনায়ক মুশফিক। যদিও সেই ধাক্কা কাটিয়ে ভালো খেলার কথাও শুনিয়ে গেছেন তিনি।

কিন্তু প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারের পর ব্লুমফন্টেইনে প্রোটিয়াদের পেস বোলারদের সামনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও কঠিন পরীক্ষা। ‘অনভিজ্ঞ’ স্কোয়াডে মুশফিক ও ইমরুল কায়েসের সঙ্গে কেবল তামিমেরই অভিজ্ঞতা আছে এই মাঠে খেলার। ২০০৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে তামিম প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছিলেন ৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ২০ রান। তার ব্যর্থতার ম্যাচে বাংলাদেশও হেরেছিল ইনিংস ও ১২৯ রানে।

সেখানেই শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া টেস্টে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় নামতে হবে এবার তামিমকে ছাড়া।