টিকে থাকার লড়াইয়ে মুখোমুখি খুলনা-রংপুর

অনুশীলন শেষে খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও কোচ মাহেলা খানিকক্ষণ ম্যাচ নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। ম্যাককালাম-গেইলের মতো টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান এনেও ধুঁকতে হচ্ছে রংপুর রাইডার্সকে। দলটি এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারেনি। শুক্রবার তারা মুখোমুখি হবে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে।  দুপুর দুইটায় শুরু হওয়া ম্যাচটি দুই দলের জন্যই টিকে থাকার লড়াই। কেননা হেরে যাওয়া দলটি ছিটকে যাবে টুর্নামেন্ট থেকে। অবশ্য জয়ী দলও সরাসরি ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়া দলটির বিপক্ষে রবিবার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ২২ গজে নামবে।  দুপুর দুইটায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শুক্রবারের এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও মাছরাঙা টেলিভিশন।

এলিমিনেটর ম্যাচটির আগে খুলনা টাইটানস অনুশীলনে ঘাম ঝরালেও রংপুর রাইডার্স ছুটি কাটিয়েছে। অবশ্য বুধবার ঢাকার বিপক্ষে রংপুর ম্যাচ খেলেছিল। টানা ম্যাচ খেলার ঝক্কি থেকে মুক্তি পেতেই বৃহস্পতিবার অনুশীলনে আসেননি রংপুরের কোনও ক্রিকেটার। যদিও খুলনা টাইটানস সকাল ১১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অনুশীলন করেছে মিরপুরের একাডেমিতে। ডানপাশের নেটে একে একে মাহমুদউল্লাহ-আরিফুল-শান্ত-আফিফ-ব্র্যাথওয়েট-ক্লিঙ্গার-পুরান-রোসোরা নেটে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়েছেন। কোচ মাহেলা তার শিষ্যদের খানিকটা পরামর্শও দেন এসময়। বিশেষ করে শান্ত-আফিফদের দিকে বাড়তি নজর দেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ।

ব্যাটসম্যানদের দিকে মাহেলা যখন ‘হেড মাস্টারের’ দৃষ্টি রাখছিলেন। তখন বসে ছিলেন না বোলিং কোচ আলফানসো থমাস। তিনি তার শিষ্যদের দেখছিলেন- রাহি-শফিউল-অ্যাবট-জোফরারা কিভাবে বোলিং করছেন। মাঝে মাঝে শফিউল-রাহিকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন খুলনার বোলিং কোচ। সবমিলিয়ে বাঁচা মরার লড়ায়ের প্রস্তুতিটা ভালোই নিয়েছে খুলনা টাইটানস।

এদিকে প্রথম দিকে টানা তিনটি ম্যাচ হেরে শেষ চারে থাকা অনেকটা অনিশ্চিত ছিল রংপুর রাইডার্সের। পরবর্তীতে ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো খেলোয়াড়ের উপস্থিতিতে দলটিতে প্রাণ ফেরে। যদিও মাঝে আবারও হারের বৃত্তে আটকে থাকতে হয়েছিল রংপুরকে। এরপর নিজেদের দশম ম্যাচে এসে খুলনাকে হারিয়েই সেরা চার নিশ্চিত করেছে রংপুর রাইডার্স। যদিও এর আগে প্রথম মুখোমুখিতে হারতে হয়েছিল রংপুরকে।

অনুশীলনে খুলনা টাইটানস। বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান নিয়ে এবারের আসরে শক্তিশালী দলই গড়েছে রংপুর। তবে সে অনুযায়ী মাঠে পারফর্ম করতে পারেনি তারা। গেইল দুটি ম্যাচে জয় এনে দিলেও এখনও বলার মতো রান করতে পারেননি ম্যাককালাম। তবে দারুণ খেলছেন দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়া এই তারকাই বেশ কয়েকটি ম্যাচে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন।

তবে কি সামনের ম্যাচগুলোর জন্য ‘আসল’ খেলাটা জমিয়ে রেখেছে রংপুর রাইডার্স! বুধবার ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়া ম্যাককালাম জানালেন, ‘ভালো উইকেট হলে বেশি রানের আশা করা যায়। ভালো আর দ্রুতগতির উইকেটেই তো রান করা সম্ভব। আশা করি সামনের ম্যাচে ভালো উইকেট হবে। আর দর্শকদের আমরা ভালে খেলা উপহার দিতে পারবো।’

রংপুর যেমন তাকিয়ে নেতা মাশরাফির দিকে, তেমন খুলনাও তাকিয়ে থাকবে অধিনায়কের দিকে। মাঝারি সারির এ দলটি গত আসরের মতো এবারও মাহমুদউল্লাহ নির্ভর। তবে দারুণ খেলছেন আরিফুল হকও। ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান প্রতিটি ম্যাচেই দারুণ ফিনিশিং দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার খুলনার বোলিং কোচ আলফানসো থমাস মাহমুদউল্লাহ সম্পর্কে বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ ‘কুল’ অধিনায়ক। সামনে থেকে দলকে দারুণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। পুরো দলকে এক সুতোয় বেঁধে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। আশা করি সামনের ম্যাচগুলোতেও তার নেতৃত্বের বিষয়গুলো দেখতে পাবো।’

ম্যাচের বাইরে দুই দলই চিন্তিত উইকেট নিয়ে। এমন অসমান বাউন্সের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের রান করা কঠিন। খুলনার বোলিং কোচ আলফানসো থমাস বললেন তেমনটাই, ‘এই উইকেটে ব্যাটিং করা সত্যিই ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। কারণ মিরপুরের উইকেট স্লো এবং এখানে বল হুটহাট ওঠানামা করে। তবে এরপরও এই উইকেটে মানিয়ে নিয়ে ভালো কিছু করতে চায় দলটি। ব্যাটসম্যাদের মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে।’ তবে উইকেটের সঙ্গে সংগ্রামটা বেশি করতে হবে রংপুরকেই। কেননা রংপুর বিদেশি ব্যাটসমান নির্ভর। আগের ম্যাচগুলোতে ম্যাককালাম-গেইলরা এমন উইকেটে অনেক সংগ্রাম করেছেন।

রংপুরের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে খুলনা স্বাভাবিকভাবেই আরও ফাঁদ তৈরি করবে। অনুশীলন শেষে দল যখন ফিরছিল মাহমুদউল্লাহ ও মাহেলা বেশ খানিকক্ষণ সময় আলোচনা করছেন। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, তাদের আলোচনা রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়েই। ম্যাচ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে খানিকক্ষণ সময় আড্ডায় কাটালেও ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে নারাজ তিনি। হয়তো চুপ থেকেই যথাসময়ে আসল কাজটা করতে মনোযোগী মাহমুদউল্লাহ এবং তার দল!