বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা…

উপরে বাঁ থেকে আশরাফুল ও রফিক, নিচে বাঁ থেকে রাসেল ও অলকআর কিছু সময়ের অপেক্ষা, তারপরই নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে শিরোপার লড়াই। এ মুহূর্তে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর দেশের কোটি কোটি মানুষ। মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ আশরাফুল, সৈয়দ রাসেল আর অলক কাপালিও বিজয়-উৎসবে মেতে ওঠার প্রতীক্ষায়। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময় টাইগারদের শুভকামনা জানিয়ে রাখলেন চার ক্রিকেটার।

মোহাম্মদ রফিক

ফাইনালে নতুন কিছু চিন্তা করলে চলবে না। নতুন কিছু চিন্তা করতে গেলে বিপদ বাড়বে, আগের ম্যাচের পারফরম্যান্সের চেয়ে খারাপ হবে। মাঠে স্বাভাবিক থেকে নিজেদের কাজ ঠিকমতো করলেই সফল হওয়া সম্ভব। তবে আমি এখনই বলছি না বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে। কারণ ভারত এমন একটা দল, যারা এর আগে বহু শিরোপা জিতেছে। শিরোপা জিততে কী করতে হয়, তারা সেটা খুব ভালো করেই জানে। বাংলাদেশ এই ট্রফি জিততে পারলে আমি নিশ্চিত, তাদের ক্ষুধা আরও বাড়বে।

আসল কথা হলো বাংলাদেশকে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে শেষ বল পর্যন্ত বলা মুশকিল কী হতে যাচ্ছে। তাই মাঠে সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করতে হবে। আমরা ফাইনাল খেলছি, এটাই আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেশি ছিল বলে অপুকে ব্যবহার করা হয়নি। তবে আমি মনে করি এটা কোনও ‘নিয়ম’ নয়। একজন বোলারের লাইন- লেংথ ভালো হলে সে যে কোনও ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বোলিং করতে পারবে। সব কিছু ঠিকমতো করতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে শিরোপা জেতা অসম্ভব নয়।

মোহাম্মদ আশরাফুল

আগের ম্যাচের একাদশ নিয়েই মাঠে নামা উচিত। ফাইনালে দলে পরিবর্তন আনা জরুরি নয়। বাংলাদেশকে আজ চাপমুক্ত হয়ে, ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে।  ভারতের অফস্পিনার সুন্দর আর লেগস্পিনার চাহালকে দেখে-শুনে খেলতে হবে। তবে ওদের ৮ ওভারে বাংলাদেশকে কমপক্ষে ৬০ রান  নিতে হবে। ব্যাটসম্যানদের ‘ডট’ বলও কম দিতে হবে। ১২০ বলের মধ্যে ২০টির বেশি ‘ডট’ যেন কিছুতেই না হয়। অনেক সময় ‘ডট’ বলই দু দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।  পাশাপাশি প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে ওদের অন্তত তিনজন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে হবে।  যত বেশি সম্ভব ‘ডট’ বল দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে বোলারদের। ২০ ওভারের ম্যাচে ফিল্ডিং গুরুত্বপূর্ণ, তাই ফিল্ডিংও খুব ভালো করতে হবে বাংলাদেশকে। আজ চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারলে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা।

অলক কাপালি

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনও দলকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দ্বিতীয় সারির দল পাঠালেও ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী।  আমাদের দলটাও খারাপ নয়। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-তামিম-সাকিব অনেকদিন ধরে একসঙ্গে খেলছে, তারা অনেক অভিজ্ঞ। নিদাহাস ট্রফিতে প্রমাণ করেছি, আমরা কী করতে পারি। টি-টোয়েন্টিতে এখনও ভারতের সঙ্গে আমরা জিততে পারিনি। ঢাকায় এশিয়া কাপের ফাইনালে হেরেছি, ২০ ওভারের বিশ্বকাপে মাত্র এক রানে হার মেনেছি।

তবে আজ দারুণ একটা ম্যাচ হবে। প্রথম দিকের ব্যাটসম্যানরা ভালো সূচনা এনে দিতে পারলে জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ফাইনালে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে আরিফুলকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। বিপিএলে খুলনা টাইটানসের হয়ে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ওর জুটিটা দুর্দান্ত হয়েছিল। আমার বিশ্বাস, আরিফুল আজ খেললে ভালো করতে পারবে। শেষের দিকে ওর ব্যাটিং অসাধারণ হয়। গত ম্যাচের মতো বোলিং করতে পারলে ভারতের রানের চাকা থামিয়ে রাখা যাবে। কারণ শ্রীলঙ্কার মতো ওদের দলে শেষের দিকে ভালো ব্যাটসম্যান নেই। অন্যদিকে ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভার আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কোনও উইকেট না হারালে আমাদের স্কোর অনেক বড় হবে।

সৈয়দ রাসেল
আমার মনে হয় উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা ঠিক হবে না। গত ম্যাচে যে দল খেলেছে, আজ সেই দলেরই খেলা উচিত। ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে দ্রুত ফেরাতে পারলে বাংলাদেশের জয়ের ভালো সুযোগ তৈরি হবে। কারণ শেষের দিকে ওদের তেমন ব্যাটসম্যান নেই। ভারতকে ১৬০ থেকে ১৭০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে ১৮০ থেকে ১৯০ রান করলে বেড়ে যাবে জয়ের সম্ভাবনা। অবশ্য উইকেট কেমন হয়, সেটাও দেখার বিষয়।  গত কয়েকটা ম্যাচে আমি দেখেছি, স্লগ ওভারে কেউ ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করে না। ইনিংসের শেষ দিকে বোলাররা ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করলে অনেক সময় হাফভলি কিংবা লো ফুলটস হয়ে যায়। এ ধরনের বল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিলে বাউন্ডারি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা। বাংলাদেশের পেসারদের অফস্টাম্পের বাইরে বোলিং করতে হবে। এ ধরনের উইকেটে স্লোয়ার বেশ কার্যকর, তাই যতটা সম্ভব ব্লক হোলে বল করতে হবে। আর এসব ঠিকমতো করতে পারলে ওদের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখা যাবে।