বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের স্পিন শক্তির লড়াই আজ

ক্যাচ অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবঅভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও জহির খানকে নিয়ে গড়া আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণকে কোনও ভাবেই পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের শক্তি জেনেও স্পিন সহায়ক উইকেটের দিকেই ‍ঝুঁকেছে মূলত নিজেদের সামর্থ্য বিবেচনা করে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তাই হতে যাচ্ছে স্পিনারদের জমজমাট লড়াই।

আজ (বৃহস্পতিবার) শুরু হচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট। সকাল ১০টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে বিটিভি ও গাজী টেলিভিশনে।

ম্যাচের আগের দিন (বুধবার) সকালে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো ও পেস বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট অনেকটা সময় ধরে দেখলেন চট্টলার উইকেট। উইকেট দেখতে দেখতেই সাকিবের মুখে চওড়া হাসি, বোঝাই যাচ্ছিল উইকেট দেখে বাংলাদেশের অধিনায়ক কতটা সন্তুষ্ট।

দুপুর দেড়টায় অনুশীলনে এসে উইকেট দেখেছেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান ও কোচ অ্যান্ড্রু মোলসও। সংবাদ সম্মেলনে রশিদ খান স্পষ্টই বলে গেলেন, ‘উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্পিন উইকেটের বাইরে খেলার কোনও ‍সুযোগ নেই। স্বাভাবিকভাবেই তাই এখানকার উইকেটেও স্পিন থাকবে।’

সাকিব অবশ্য চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে সংশয়ের কথা বলে গেছেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘অনেক সময় চট্টগ্রামে যেমন উইকেট প্রত্যাশা করা হয়, তেমনটা পরবর্তীতে হয় না। আমরা আসলে ওপেন মাইন্ডে আছি। যে ধরনের উইকেটই হবে, চেষ্টা করবো সেটার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালোভাবে মানিয়ে নেওয়ার। সেটি করতে পারলে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।’

আফগানিস্তানের অনুশীলন শেষে প্রধান কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু স্থানীয় এক বোলারকে নিয়ে আসেন উইকেটে। কতটা স্পিন ধরলো, তার পরীক্ষাই বুঝি হয়ে গেল কয়েক ওভার বোলিংয়ে। অপেশাদার ওই স্পিনারের বলই যেভাবে ঘুরলো, তাতে করে টস হয়ে উঠতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একদম নতুন উইকেটেই এমন ঘূর্ণি শেষ দিনগুলোতে কিসে রূপ নেবে, তার ধারণা খুব ভালো মতোই পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে টস জিতে ব্যাটিং নিতে ভুল করবেন না সাকিব কিংবা রশিদ।

সাকিব মানছেনও, ‘এশিয়াতে সবসময়ই টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়। টস জিততে পারলে বাড়তি সুবিধা একটু থাকবে। তবে যতই সুবিধা-অসুবিধা থাকুক, গুরুত্বপূর্ণ হলো শুরুটা ভালো করতে হবে। ভালো মুহূর্তটা ধরে রাখা বেশি জরুরি।’

স্পিন নির্ভর উইকেট হলেও স্পিনারদের ছাপিয়ে ব্যাটসম্যানদের ভূমিকাটাই মূখ্য হয়ে উঠবে জহুর আহমেদের ২২ গজে। দুই দলের স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে যে দলের ব্যাটসম্যানরা সফল হবেন, তাদের পক্ষেই ম্যাচের ফল যাবে বলে মনে করছেন দুই অধিনায়ক।

নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবাল না ‍থাকায় ওপেনিংয়ে নতুন পরিকল্পনা সাজাতে হয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানজেমেন্টকে। তরুণ দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাদমান ইসলামকে ইনিংস শুরু করতে দেখার সম্ভাবনাই জোরালো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদমানের চেয়ে সৌম্যর অভিজ্ঞতা বেশি থাকলেও টেস্টে এখনও নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশ নিয়ে খুব বেশি কাটাছেঁড়া করার পরিকল্পনা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। গত বছর ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের একাদশের পথেই যেতে পারে তারা। চার স্পিনারের সঙ্গে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যানকে রেখে একাদশ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে ওই ম্যাচের মতো পেসারবিহীন বাংলাদেশকে দেখা যাবে।

সাকিবের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়েই পরিকল্পনা। তবে শেষ মূহূর্তে চট্টগ্রামে খেলা শেষ টেস্টের একাদশের মতো একজন পেসারও খেলাতে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে মোস্তাফিজুর রহমানের বদলে দেখা যেতে পারে আবু জায়েদ রাহীকে। বুধবার নেটে নতুন ও পুরোনো বলে বোলিং অনুশীলনের পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলনও করানো হয়েছে তাকে।

টেস্ট ক্রিকেটে নবীনতম দল আফগানিস্তান। এমন একটি দলের বিপক্ষে লড়াই কতটা চ্যালেঞ্জের? সাকিবের উত্তর, ‘(জিতলে) প্রশংসা হয় না, আমার কাছে মনে হয় ভুল ধারণা। কারণ আমরা ক্রিকেটাররা জানি, এটা কত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এবং জিততে হলে কতটা পারফর্ম করতে হয় ও কতটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।’

দশম দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৯ দলের বিপক্ষে মুখোমুখি প্রথম ম্যাচের সবকটিতে বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম লড়াইয়ের আগে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অনেকটাই এগিয়ে স্বাগতিকরা। স্বাভাবিকভাবেই ফল বাংলাদেশের পক্ষে আসার কথা। সাকিব অবশ্য এভাবে ভাবছেন না, ‘র‍্যাংকিং খুব বেশি ম্যাটার করে বলে আমার কাছে মনে হয় না। ওরা এতদিন ধরে শর্ট ফরম্যাটে ভালো ক্রিকেট খেলছে। এই ফরম্যাটেও তারা উন্নতি করছে। ওদের দলে অনেকেই আছে, যারা ম্যাচ জেতাতে সক্ষম। তাই এভাবে ভাবার সুযোগ নেই। আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলেই জিততে হবে।’