শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রাজশাহীর জয়

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর মেহেদী হাসান পেয়েছেন হাফসেঞ্চুরিমুশফিক-মেহেদী-নুরুলদের এক একটি ছক্কা গ্যালারিতে গিয়ে পড়ছে, তবুও গ্যালারিতে নেই উচ্ছ্বাস! এমন দৃশ্য ক্রিকেটে বেমানান হলেও গত কিছুদিন ধরে এভাবেই চলছে ক্রিকেট। এমন আবহে খেলেও উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটাররা। আজ (মঙ্গলবার) দর্শকবিহীন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে প্রতিটি মুহূর্তেই। মেহেদী হাসানের অলরাউন্ডস পারফরম্যান্সে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ২ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। 

সোহান-মেহেদী-আনিসুলের ব্যাটে ভর করে রাজশাহী ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। জবাবে ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ঢাকার জন্য। শেষ ওভারে অফস্পিনার মেহেদী হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে ২ রানে হার মানতে হয় মুশফিকের ঢাকাকে।

১৭০ রানের ‍লক্ষ্যে খেলতে নেমে রাজশাহীর মতো ঢাকাও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও ইয়াসির আলী ফিরে যান দলীয় ৩৮ রানে। মোহাম্মদ নাঈমকে নিয়ে অধিনায়ক মুশফিক প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ব্যক্তিগত ২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন নাঈম। ১৭ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় নাঈম নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।

চতুর্থ উইকেটে যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীকে নিয়ে ৭১ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। কিন্তু তাদের মন্থর ব্যাটিংয়ের খেসারত দিতে হয়েছে পুরো দলকে। আকবর ২৯ বলে ৩৪ রান করে বিদায় নেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এবাদত হোসেনের লেন্থ বল খেলতে গিয়ে নুরুল হাসান সোহানের তালুবন্দী হন মুশফিক। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ বলে মুশফিক করেন ৪১ রান।

শেষ ৩ ওভারে ঢাকার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৬ রানের। কঠিন এই পথটা মুক্তার আলীর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পেরিয়েই যাচ্ছিল ঢাকা। কিন্তু শেষ ওভারে মেহেদীর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের কাছে হার মানতে হয় মুক্তার আলীকে। ৬ বলে ৯ রান প্রয়োজন থাকলেও মুক্তার আলী নিতে পারেন ৬ রান।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও সফল মেহেদী হাসান। এই অফস্পিনার ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। এছাড়া এবাদত, ফরহাদ, আরাফাত নিয়েছেন একটি করে উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ পাওয়া মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী শুরুতেই হোঁচট খায়। রাজশাহীর দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন ও আনিসুল ইসলাম শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৭ রানে নাসুমের শিকারে পরিণত হন নাজমুল। বাঁহাতি স্পিনার নাসুমের প্রথম ওভারে দুই ছক্কা মারার পর আরেকটি শটস খেলতে গিয়ে লং অনে দাঁড়ানো তানজিদের শিকারে পরিণত হন নাজমুল।

পরের ওভারগুলোতে রাজশাহীর জন্য আরও ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছিল। ৫.৫ ওভারে মাত্র ৩৪ রান তুলতেই রাজশাহী হারায় টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যানকে। রনি তালকুদার (৬), মোহাম্মদ আশরাফুল (৫), ফজলে মাহমুদ (০) কেউই ঢাকার বোলারদের সামনে সুবিধা করতে পারেননি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ২৩ বলে ৩৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন আনিসুল। দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামা আনিসুল পেয়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসের দেখা। এদিকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ট টেস্ট সেঞ্চুরিয়ার আশরাফুল ধীরস্থির ভাবেই শুরু করেছিলেন। পয়েন্টে দাঁড়ানো নাঈমের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল।

ষষ্ঠ উইকেটে নুরুল হাসান ও মেহেদী হাসান মিলে ৮৯ রানের জুটি গড়ে রাজশাহীকে বিপদমুক্ত করেন। দুজনই সাবলীল ব্যাটিং করে দলের স্কোর দেড়শোতে নিয়ে যান। নুরুল ২০ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে তার ৩৯ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। ইনিংসের ১৩ বল বাকি থাকতে মুক্তার আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সোহান। তিন বলের ব্যবধানে ফিরে যান মেহেদীও। ৩২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় মেহেদী টুর্নামেন্টের প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান। এরপর ফরহাদ রেজার ৬ বলে ১১ রানের ইনিংসে ভর করে রাজশাহী ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায়।

ঢাকার সবেচেয়ে সফল বোলার মুক্তার আলী। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। এছাড়া নাঈম হাসান, মেহেদী হাসান রানা ও নাসুম আহমেদ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। ৪ ওভারে ২৯ রান খরচায় উইকেটশূন্য ছিলেন রুবেল হোসেন।