ছয় নম্বরে ব্যাটিং উপভোগ করছেন মুশফিক

পুরো ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই চার নম্বরে ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম। ওই পজিশনে ব্যাটিং করেই সবচেয়ে বেশি সফল তিনি। ক্যারিয়ারের ৯ সেঞ্চুরির ৮টিই পেয়েছেন চার নম্বরে। অবশ্য ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ ম্যাচেই ৬ নম্বরেও ব্যাটিং করেছেন। পরের সময়টাতে বেশিরভাগই চার নম্বরে দেখা গেছে তাকে, কিছু ম্যাচে ৫ নম্বরেও ব্যাটিং করেছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। লম্বা সময় ধরে চার নম্বরে ব্যাটিং করা মুশফিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৬ নম্বরে নেমে খেলেছেন দুর্দান্ত দুটি ইনিংস।

৫০ ওভারের ক্রিকেটে মুশফিক খেলেছেন ২৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এত ম্যাচের মধ্যে চার নম্বর পজিশনেই খেলেছেন ১১৭টি ম্যাচ। এই সিরিজের আগে ২০১৬ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষবার ৬ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেছিলেন। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে মুশফিকের ব্যাটিং পজিশন ফেরে চারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে পর্যন্ত কেবল আটটি ম্যাচেই ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাও সেটি পাঁচ নম্বরে। তবে মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের সুযোগ দেওয়ার পর মুশফিককে আয়ারল্যান্ড সিরিজে ছয় নম্বর ব্যাটিং পজিশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ১১৭ ম্যাচে ৮ সেঞ্চুরি ও ২৯ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪ হাজার ৩৬৭ রান নিয়ে চার নম্বরেই সবচেয়ে সফল ছিলেন মুশফিক। অন্যদিকে ৬ নম্বরে নেমে ৫০ ম্যাচে ৮ হাফ সেঞ্চুরিতে রান ছিল ১ হাজার ৩১৪। তবে আইরিশদের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচেই মুশফিক তুলে নিয়েছেন ১৪৪ রান।
 
ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে মুশফিক নতুন পজিশনে খুব ভালো করেই মানিয়ে নিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ২৬ বলে ৪৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৬০ বলে বাংলাদেশিদের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন। বৃহস্পতিবার ম্যাচ শুরুর আগে  সম্প্রচার স্বত্ব পাওয়া টি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেন মুশফিক।

নতুন পজিশনে ব্যাটিং নিয়ে মুশফিক বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ছয় নম্বরে ব্যাটিং করাটা আমার জন্য ভালো সুযোগ ছিল। আমি আগেও ওই পজিশনে ব্যাটিং করেছি। আমার মনে হয় শুরুর দিকে উইকেট খানিকটা ভেজা ছিল। কিন্তু আমাদের ওপেনার, তিন কিংবা চারে যারা খেলেছে তারা দারুণ ব্যাটিং করেছে। এমন উইকেটে ব্যাটিং করাটা আমি উপভোগ করেছি। কারণ ব্যাটিং করার জন্য বেশ ভালো উইকেট ছিল। আমি শুধু আমার দক্ষতা কাজে লাগিয়েছি।’

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে মুশফিক ও তাওহিদ হৃদয় জুটি বেঁধেছেন।  প্রথম ম্যাচে ৮০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ১২৮ রানের জুটি বাঁধেন তারা। এই দুইজনের বড় জুটির উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দুই ম্যাচের রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে। পাশাপাশি নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসরাও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তরুণদের এমন আগ্রাসী ব্যাটিংই সিনিয়রদের মনোবল বাড়াতে ভূমিকা রাখে বলে মনে করেছেন মুশফিক, ‘সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে অবশ্যই এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগায়। কারণ যখন হৃদয়, শান্তর মতো তরুণরা রান করে, এটা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আমাদের আসলে কোনও চাপ নেই। আমরা শুধু যাই, আর নিজেদের সেরাটা দেই।’

মুশফিক আরও বলেছেন, ‘আপনি যখন ওইরকম স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করবেন এবং অপরপ্রান্তে একজন তরুণ থাকবে তখন সেটা উপভোগ্য। আশা করি আমি এটা বয়ে নিতে পারবো।’

আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে। তার আগে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে নিজেদের প্রস্তুত করতে মরিয়া বাংলাদেশ। সাধারণত উপমহাদেশের বাইরের দেশগুলোকে স্পিন নির্ভর উইকেটে পিষ্ট করে জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ। কিন্তু আয়ারল্যান্ড সফরে পুরোপুরি স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে সাফল্য পাচ্ছে স্বাগতিকরা। এমন উইকেটে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ, বললেন মুশফিক, ‘এটা আসলে পুরোটা কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে। আমরা সবশেষ দুই-তিন সিরিজে এমন স্পোর্টিং কন্ডিশনে খেলিনি। সেখানে স্পিনার ও পেসারদের জন্য সুবিধা ছিল। আমার মনে হয় এবারই প্রথম ব্যাটিং করার উইকেট এত ভালো ছিল। আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে চাই। দেখা যাক ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে কতদূর যেতে পারি। ’

সবশেষে হাথুরুসিংহের প্রশংসাও ঝরলো মুশফিকের কণ্ঠে, ‘এখন পর্যন্ত বেশ ভালো। নতুন কোচ এসেছে, তার সঙ্গে আমাদের বন্ধনটা ভালো। আশা করি আমরা পুরো বছর এই মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারবো। আমার মনে হয় ভালো একটা দল নিয়েই বিশ্বকাপে যাবো।’