সাংবাদিকদের হেয় করে কথা বলা লিটন দাসের জন্য নতুন কিছু নয়। এ কারণে আগেও কয়েকবার সমালোচিত হন বাংলাদেশি ওপেনার। অনুশীলনে হোক কিংবা প্রেস কনফারেন্স বা গ্যালারিতে বসে, লিটনের সাংবাদিকদের অপমান-অপদস্ত করার ঘটনার সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছেই। রবিবার পুনের টিম হোটেলের ঘটনা তো সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দল এখন পুনেতে। এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের ম্যাচ ১৯ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে। তার আগে তিন দিনের ছুটি পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিয়মের বেড়াজাল না থাকায় ক্রিকেটাররাও শহরের এদিক ওদিক উপভোগ্য সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ জিম, সুইমিং করেছেন।
রবিবার দুপুরে টিম হোটেল থেকে খেলোয়াড়রা যে যার মতো পুনেতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। টানা দুই ম্যাচে হারের গ্লানি ভুলে প্রত্যেকেই হাসিখুশিই ছিলেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল লিটন। ক্রিকেটারদের আসা-যাওয়ার ফাঁকে গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের কাজও সেরে নিচ্ছিলেন, কাউকে বিরক্ত করা ছাড়া। হোটেলের স্টাফরাও ছিলেন বেশ সাবলীল। সংবাদকর্মীদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন লিটন!
গাড়ির উঠার আগে একজন নিরাপত্তাকর্মীকে ডাক দিয়ে লিটন বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলে উঠেন, ‘মিডিয়া এখানে কেন? আমার ছবি তুলছে কেন?’ ওখানেই লিটন থামেননি। ভেতরে থাকা ম্যানেজারকে ডেকে আনেন। লিটনের এই প্রতিক্রিয়ার পর নিরাপত্তাকর্মী সাংবাদিকদের কাছে এসে বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘আপনাদের খেলোয়াড় অভিযোগ তুলেছেন। আপনাদের বেরিয়ে যেতে হবে।’
কী অভিযোগ করেছেন তা জানতে চাইলে সরাসরিই তারা উত্তর দিয়েছেন, ‘আপনারা এখানে কেন এসেছেন সেটা নিয়েই তার আপত্তি।’
গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে লিটনের এমন অভিযোগ করা বিস্ময়কর বটেই। অথচ তার সতীর্থরা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর লিটন দূরদেশে অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার সৃষ্টি করলেন।
এর আগে সিলেটে বিপিএল চলাকালেও এক সাংবাদিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন লিটন। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের এক কোনায় ক্যামেরা সেট করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সেই ফাঁকেই লিটনের বাহুতে ট্যাটু দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন এক সাংবাদিক। লিটন হাত সরিয়ে বিরক্ত কণ্ঠে বলে উঠেন, ‘এখানে দেখার কী আছে!’
খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে অনুশীলন চলছিল। লিটন অপেক্ষমান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, পরে তিনি কথা বলবেন। দুপুর তিনটা বেজে গেলেও লিটনের খবর নেই। একাডেমি মাঠ থেকে ফেরার পথে জানান কথা বলবেন না। তখন এক সাংবাদিক লিটনকে বলেন, ‘আপনার জন্য আমরা না খেয়ে অপেক্ষা করছি।’ লিটনের পাল্টা জবাব ছিলো, ‘আমি কি আপনাকে খেতে নিষেধ করেছি।’
২০১৫ বিশ্বকাপ দলে লিটন আছেন এমন শিরোনামে একটি দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। যদিও শেষ অব্দি লিটনকে রাখা হয়নি বিশ্বকাপ দলে। বিষয়টি নিয়ে লিটনের প্রতিক্রয়া জানতে আসলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টারের সঙ্গে তর্কে জড়ান উইকেটকিপার এই ব্যাটার।
শুধু এতটুকুই না, এমন অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন লিটন। প্রেস কনফারেন্সে তো প্রায়ই সংবাদকর্মীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে উত্তর দেন এই ব্যাটার। খুব বেশি দিন আগের নয় এই ঘটনা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালে তামিম ইকবাল অবসরের ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনও চাপ আছে? প্রশ্ন থামার সঙ্গেই লিটন দাস বলে দিলেন, 'না ভাইয়া, চিল, চিল।'
এমনিতেই ব্যাটে রান নেই। তামিমবিহীন ওপেনিং পজিশনে লিটনকেই গুরু দায়িত্ব সামলাতে হতো। কিন্তু তিনি পারেননি। সেই চাপ তো তার আছেই। রবিবার যে ঘটনা ঘটালেন, তাতে করে নিশ্চিতভাবেই এই চাপটা আরও বাড়বে। এখন আশা এই সমালোচনাকে পেছনে ফেলে লিটনের ব্যাটে আলোর ঝলকানির দেখা দেবে!