ক্রিকেটের ভাষায় মুম্বাইকে বলতে পারেন গ্রেট শচীন টেন্ডুলকারের শহর, আর সিনেমার দিক দিয়ে বেতাজ বাদশা শাহরুখ খানের। শচীন-শাহরুখের শহরটি মনোরম আরবসাগর ঘেষা। সব দিক দিয়ে ঝলমলে আকর্ষণীয় এই শহরের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের আরও একটি বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কঠিন এক পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সাকিব আল হাসানের দলটির সামনে। প্রথম জয়ের পর টানা তৃতীয় ম্যাচ হেরে এখন পঞ্চমটিতে এসে ভাগ্য ফেরানোর পালা। প্রতিপক্ষ ‘বিধ্বংসী’ দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিধ্বংসী কেন বলা হচ্ছে? তা এরই মধ্যে বুঝে যাওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত মারমুখি ব্যাটিংয়ে বড় ইনিংস গড়ে তিনটি ম্যাচ জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডেভিড মিলার-ডি ককরা। শুধু কি তাই! চলমান বিশ্বকাপে ১৭টি সেঞ্চুরির মধ্যে পাঁচটি তাদের মারমুখো ব্যাটারদের কাছ থেকে এসেছে!
ভারতের যেই মাঠেই আগে ব্যাট করছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেটাতেই জিতে যাচ্ছে! বড় সংগ্রহ করে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আস্তে আস্তে নক আউট পর্বের দিকে এগোচ্ছে প্রোটিয়ারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রান গড়ে ম্যাচ জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ইতিহাসে দলীয় ইনিংসের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ইনিংস গড়ে জয়ের ধারাবাহিকতা আছে। সেঞ্চুরির মালিক আবার চার জন। কুইন্টন ডি কক একাই দুটোর মালিক! বাকি তিনটি এইডেন মারক্রাম, রাসি ফন ডার ডুসেন ও হেনরিখ ক্লাসেনের। এর মধ্যে ক্লাসেনের ৬৭ বলে ১০৯ রানের ঝলমলে ইনিংসের কথা একটু আলাদা করে বলতে হবে। এই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে তুলোধুনো করেছে প্রোটিয়ারা। ক্লাসেনের বিধ্বংসী ব্যাটিং সবার চোখে লেগে আছে।
ঠিক এই মাঠে মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে। তাই ইংল্যান্ড ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হয় কিনা এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এমন ঝলমলে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সের বিপরীতে বাংলাদেশের শুধু লিটন দাসের সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংসটি একটু বলার মতো।
এছাড়া বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা চার ম্যাচে তিনটিতে জিতেছে। হেরেছে একটিতে। বাংলাদেশ ঠিক উল্টোটি। জিতেছে একটিতে, হেরেছে বাকি তিনটিতে!
বাংলাদেশের যদি প্রোটিয়াদের দুর্গে আঘাত হানতে হয়, তাহলে আগের সব ব্যর্থতা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নতুন উদ্যম নিয়ে শচীনের চিরচেনা মাঠে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আগের পরিসংখ্যান যতই সমানে সমান হোক না কেন, এবার যে অন্যরকম চিত্র হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবার পরে ব্যাট করে শুধু ‘পুচকে’ নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে। বাংলাদেশ শুধু গত বিশ্বকাপের জয়ই নয়, নেদারল্যান্ডসের পারফরম্যান্স থেকেও প্রেরণা নিতে পারে। তবে আগে ব্যাটিং করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকা কী করতে পারে তা নিয়ে ভয়ই থেকেই যায়।
ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশের তাই নতুন উদ্যমে শুরু করার অপেক্ষায়। টপ অর্ডারে লিটন-তানজিদ-তৌহিদদের রান তো পেতেই হবে। অভিজ্ঞ মুশফিক-মাহমুদউল্লার দায়িত্বও কম নয়। এছাড়া বোলারদেরও দায়িত্ব নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। যদিও ওয়াংখেড়ের ব্যাটিং উইকেটে কে যে তাণ্ডব চালায় তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে হবে।
তারপরও স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সেরা চারে জায়গা করে নিতে হলে আগামীকালই কিছু একটা করে দেখানোর সময়। একটি দল হয়ে খেলে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নতুন রূপে দেখাতে হবে। তবে পথ অনেক বন্ধুর, জটিল। সাকিব-লিটনরা যে এই মুহূর্তে খাদের কিনারায়!
তাই এই মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি। চাকচিক্যে ভরা মুম্বাই শহরটি শচীন-শাহরুখদের জন্য বিখ্যাত হলেও ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জিততে পারলে ক্রিকেট সমর্থকরা তো দিনটি আলাদা করেই মনে রাখবে, শুরু করবে নতুন করে শেষ চারের ক্ষণগণনা। বাংলাদেশ কী তা পারবে?