সিলেটে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে কাল বুধবার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলেই সিরিজ জয়ের আনন্দে মাততে পারবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আর যদি জিততে পারে, তাহলে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ দিতে পারবে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে নয়টায় ম্যাচটি শুরু হবে, সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।
ক্রিকেটের লম্বা ফরম্যাটে প্রায় ২৩ বছর পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে ক্রিকেটের এই অভিজাত সংস্করণে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে তারা। এর মধ্যে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হলেও কিছু জয় বাংলাদেশকে দিয়েছে স্বস্তিও। যেমন গত ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল জয়। ১৩৯ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের কেবল ১৯তম জয় এটি। তবে যেভাবে এসেছে তা প্রশংসা পাওয়ার মতোই। সিলেটের মতো ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে পারলে ঢাকাতে এমন ফল সম্ভব।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে দ্বিতীয় টেস্টের আগে আলোচনায় মিরপুরের উইকেট। এমনিতেই স্পিন বান্ধব মিরপুরের উইকেট। তার মধ্যে কখনও কখনও অসমান বাউন্স থাকে। সবমিলিয়ে আগেভাগে মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। সিলেটে ২০ উইকেটের মধ্যে ১৮ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। তার মধ্যে তাইজুল ইসলাম একাই নেন ১০টি!
বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো বলেই দিলেন দুই সেশন না গেলে উইকেট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘মিরপুরে আসলে কয়েক সেশন খেলার আগে পিচ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। এখানে অনেক বেশি খেলা হয়। আমার মনে হয় না, মিরপুরের মতো বিশ্বে আর কোনও স্টেডিয়ামে এত বেশি খেলা হয়। আমরা অনুমান করতে পারছি না এখানে কী হতে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো খুব বেশি পরিবর্তন না নিয়েই মাঠে নামতে।’
শেষ ৫ বছরে মিরপুরে হওয়া ৭ টেস্টে বোলাররা পেয়েছেন ২১৫ উইকেট। যেখানে স্পিনাররা নিয়েছেন ১২৬ উইকেট, পেসাররা ৮৯টি। বাংলাদেশের সাফল্য ১০৮ উইকেট। দশ স্পিনার পেয়েছেন ৬৯ উইকেট। ৬ পেসাররা পেয়েছেন বাকি ৩৯ উইকেট। এই বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেট টেস্টের নায়ক তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনার ২৫.৩৮ গড় ও ২.৫৩ ইকোনমিতে পেয়েছেন ৩১ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টিম সাউদি অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের লড়াই হবে স্পিনারদের বিপক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আপনি বিশ্বের এই অংশে খেলতে আসলে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, স্পিনাররা বড় ভূমিকা পালন করবে। আমরা প্রথম ম্যাচেও তা দেখেছি। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই প্রত্যাশা করছি। যদিও আমরা দেখেছি, কাইল জেমিসন প্রথম ম্যাচে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিল। আশা করছি এই ম্যাচেও পারবে। তবে লড়াইটা স্পিনারদের ভেতরে হবে বলতে দ্বিধা নেই। এটা আমরা দ্বিতীয় টেস্টে প্রত্যাশা করছি।’
ঢাকা টেস্টের একাদশে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। সিলেটে শান্তর নেতৃত্বে খেলা দলটাকেই দেখা যেতে পারে। তবে শেষ মুহূর্তে নাঈম হাসানের জায়গাতে কেবল পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। মঙ্গলবার অনুশীলনে আঙুলে চোট পান এই স্পিনার। যদিও বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগ বলছে বড় কোনও সমস্যা নেই নাঈমের। সেটি হলে আগের টেস্টের একাদশ নিয়েই মাঠে নামার জোর সম্ভাবনা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড একাদশে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। একজন পেসার কমিয়ে খেলানো হতে পারে বাড়তি একজন স্পিনারকে। এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে ব্যাপক আলোচনায় মিচেল স্যান্টনার ও রাচিন রবীন্দ্র। দুজনের কেউই সিলেটে খেলেননি। এজাজ প্যাটেল ও ইশ সোধিকে নিয়ে মাঠে নেমেছিল কিউইরা। এজাজ পারলেও সোধি তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাই স্যান্টনার ও রাচিনকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শেষ দুদিনে তাদের অনুশীলন দেখেও বোঝা গেছে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।
সিলেট টেস্ট স্পোর্টিং উইকেটে জেতার পর মিরপুরে কেমন উইকেটে খেলা হবে সেটি নিয়ে সংশয় আছে। তবে বাংলাদেশ দলে স্পিনারদের আধিক্য বেশি থাকায় টিম ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিতভাবেই স্পিন সহায়ক উইকেটই চাইবেন। ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে যদি সিরিজ জেতা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে দারুণ এক ইতিহাস রচিত হবে। সেই হিসেবে মিরপুরে আরও একবার চিরায়ত ধীরগতির উইকেটই দেখা যেতে পারে। তবে যে উইকেটেই খেলা হোক না কেন, দুই দলের ব্যাটারদের জন্যই কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।