দরিভাল জুনিয়র, ১১ বছরে ৩৩১ ম্যাচের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে যিনি জুনিয়র নামেই পরিচিত ছিলেন। সাবেক এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে ফুটবলারের চেয়ে কোচ হিসেবেই পেশাদার বলা যায়। ২০টিরও বেশি ক্লাবকে কোচিং করিয়ে পাকা কোচ তিনি। খুব বেশি হাইলাইটে ছিলেন না দরিভাল, ২০১০ সালে সান্তোসের কোচ থাকাকালে একবার নেইমারকে পেনাল্টি দিতে না দেওয়ায় তারকা ফরোয়ার্ডের বিরোধিতার কারণে বরখাস্ত হয়েছিলেন। এই বছরের শুরুতে তার নাম বলতে গেলে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হয় ব্রাজিল তাকে প্রধান কোচ ঘোষণার পর।
গত জানুয়ারিতে ফার্নান্ডো দিনিজকে ছাঁটাই করে তাকে দায়িত্ব দেয় ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। ২০২২ সালে ফ্ল্যামেঙ্গোকে কোপা দো ব্রাজিল ও কোপা লিবার্তাদোরেস জেতান, গত বছর সাও পাউলোকে এনে দেন কোপা দো ব্রাজিল। রিয়াল মাদ্রিদের কার্লো আনচেলত্তির প্রতীক্ষায় থেকে ভারপ্রাপ্ত কোচকে দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছিল তারা। কিন্তু হুট করে ইতালিয়ান কোচ পিঠ দেখান। কোচ নিয়োগে পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটে। দিনিজের অধীনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বছরের শেষ তিন ম্যাচ হারের পর দুঃসহ সময়ে দরিভালের চেয়ে আর ভালো কাউকে খুঁজে পাচ্ছিল না ব্রাজিল। চুক্তির মেয়াদ কতদিনের, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছিল, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাকে রেখে দিতে চায় সেলেসাওরা।
দরিভাল জানুয়ারিতে এলেও মার্চে প্রথমবার ডাগআউটে দাঁড়ান। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পে খেলোয়াড়দের একত্রিত করার পাশাপাশি দলকে গোছানোতেই সময় কাটিয়েছেন। তারই ফসল পেয়েছেন নিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে। এরপর স্পেনের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-৩ গোলের ড্র করে তারা। কোপা আমেরিকার আগে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩-২ গোলে জয়ও পায়। তিনটিতেই গোল করে এন্দ্রিক হয়ে ওঠেন দরিভালের তুরুপের তাস। তবে পুচকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্রয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিশ্চয় পড়েছিল তার কপালে।
কোপায় শুরুটা ভালো হয়নি ব্রাজিলের। কোস্টারিকার সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে সেলেসাওরা। টানা ২৫ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকা কলম্বিয়ার বিপক্ষে লিড নিলেও তা ধরে রাখতে পারেনি, ড্র হয় ম্যাচটি। তাতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হারায়। আর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে হয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উরুগুয়ের সঙ্গে। বল দখল থেকে শুরু করে টার্গেটে শট নেওয়ায় এগিয়ে থাকলেও নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় গোলশূন্য স্কোরে। এই আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করা উরুগুয়ের বিপক্ষে গোলপোস্ট অক্ষত রেখে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা। কিন্তু টাইব্রেকার ভাগ্যে ৪-২ গোলে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়।
৯০ মিনিটের খেলা শেষে ও পেনাল্টির আগের একটি মুহূর্ত কোচের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিচ্ছে। যখন টাইব্রেকারের আগে উরুগুয়ে কোচ মার্কো বিয়েলসা খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নোটপ্যাড-কলম নিয়ে কৌশল বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ঠিক তখন ব্রাজিলের খেলোয়াড়রাও গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু সেখানে নেই দরিভাল। দলছুটের মতো খেলোয়াড়দের পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছেন!
একই সময়ে দুই কোচের ভিন্ন দুটি মুহূর্তের ছবি এখন মোটামুটি ভাইরাল। তাতে ব্রাজিলের ভক্ত-সমর্থকরা তো বটেই, বিরোধীরাও ৬২ বছর বয়সী কোচের জন্য করুণা প্রকাশ করেছেন। কারও মতে, ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা নিজেদের এতটাই বড় মনে করেন যে কোচকে দামও দেন না। দরিভালকে কেউ কোচই মনে করেন না, এমন দাবি কারও কারও। আর গুরুকে সম্মান না দিলে শিষ্যের কি পরিণতি হতে পারে, সেই প্রমাণ কিন্তু হাতেনাতে পেয়ে গেলো ব্রাজিল!
অবশ্য কোপা থেকে এমন বিদায়ের পর দরিভালের চাকরি নড়বড়ে করে দিয়েছে। আবার খেলোয়াড়দের এমন উপেক্ষা! শুধুমাত্র নেইমার তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় সান্তোস থেকে চাকরি হারিয়েছিলেন দরিভাল, এবার জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কাছে পাত্তা না পাওয়া নিঃসন্দেহে তার ভবিষ্যতকে আরও প্রবল অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিলো।