‘ফুটবলকে এগিয়ে নিতে হলে লিগের কাঠামো বদলাতে হবে’

বাংলাদেশ ফুটবল দলের কোচ জেমি ডেএশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ প্রথমবার নক আউট পর্বে খেলায় ভেসেছেন প্রশংসার জোয়ারে। যদিও সাফ ফুটবলে টানা দুই ম্যাচ জেতার পরও নেপালের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ায় সমালোচনাও কম শুনতে হচ্ছে না জেমি ডে’কে। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তিন মাসের ‘অম্লমধুর’ অভিজ্ঞতা ইংল্যান্ড থেকে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন তিনি।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চম স্তরের দল ব্যারো এএফসি থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন জেমি। শুরুতে তার নিয়োগ নিয়ে ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। জাতীয় দল কিংবা ইংল্যান্ডের বাইরে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা না থাকা একজন বাংলাদেশের ফুটবলকে কতদূর এগিয়ে নিতে পারবেন, সেই প্রশ্ন উঠেছিল জোরেশোরে।

৩৮ বছর বয়সী এই কোচ লাল-সবুজ দলের দায়িত্ব নিয়ে কিন্তু খোলনলচে পাল্টানো শুরু করেছেন। খেলোয়াড়দের খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই বদল এনেছেন। সামনে আসছে আরও অনেক কিছু। সেই সবের সঙ্গে সাফ ফুটবল নিয়ে বিস্তর আলোচনার চুম্বক অংশ বাংলা ট্রিবিউন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলের ভুল নিয়ে এখনও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

জেমি: আসলে মতামত তো সবাই দিতে পারে। এটাই ফুটবল। যে কারণে ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয় খেলা। আর আগেই বলেছি, ফুটবলে এমন ভুল হতেই পারে।

প্রশ্ন: সাফে ব্যর্থতা নিয়ে বাফুফে সভাপতি তো তদন্ত করবেন...

জেমি ডে: সব কিছু মিলিয়ে বলতে পারি, যেভাবে খেলোয়াড়রা উন্নতি করেছে, তাতে তাদের পারফরম্যান্সে আমি বেশ খুশি। তাদের পারফরম্যান্স কিংবা খেলার ভঙ্গি যাই বলা হোক না কেন, আমি সন্তুষ্ট।

প্রশ্ন: কিন্তু সাফের ব্যর্থতায় খেলোয়াড় সহ সবাই তো হতাশ!

জেমি: হ্যাঁ, এটা ঠিক। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে ওঠা হয়নি, আমরা পারিনি। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য ছিল। ইতিবাচক দিক হলো দুই ম্যাচে জিতেছি, একটিতে হেরেছি। এক গোলের ব্যবধানে বাদ পড়তে হয়েছে। এটা লজ্জার বিষয় যে অন্য গ্রুপ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়েও সেমিফাইনালে খেলেছে, আর আমরা ৬ পয়েন্ট নিয়ে পারিনি। সাফে হেরে গিয়ে হতাশ হয়েছে সবাই। কিন্তু কয়েক মাসের পারফরম্যান্স দেখলে সবার ইতিবাচক হওয়া উচিত।

প্রশ্ন: সামনেই দেশের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল। সেখানে আরও একটি পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। আপনার পরিকল্পনা কী?

জেমি: আমাদের এখন পরবর্তী প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে অনুশীলনের সময়ক্ষণ চূড়ান্ত হবে। বঙ্গবন্ধু কাপে আবারও কঠিন প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। তবে তরুণদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতার আসর হবে। তাদেরকে নতুন করে শুরু করতে হবে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে লক্ষ্য?

জেমি: এই আসরে আমাদের ভালো করার লক্ষ্য থাকবে। আর বাংলাদেশের মানুষ সবাই জিততে চায়। আসলে জয় চায় সবাই, এটাই স্বাভাবিক। আমরাও চাইব তাই করতে।

প্রশ্ন: সাফের খেলোয়াড়রাই কি থাকছে বঙ্গবন্ধু কাপে?

জেমি: বেশিরভাগই আগের খেলোয়াড় থাকবে। হয়তো দুই-একটি জায়গায় বদল আসতে পারে। লেফট আউটে নতুন কেউ আসবে।

প্রশ্ন: দেশের বাইরে অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের নিয়ে কি কোনও পরিকল্পনা আছে?

জেমি: আমরা ইতিমধ্যে তাদের সন্ধানে আছি। এই চেষ্টা সামনের কয়েক মাস থাকবে। যদি তাদের কাউকে পাওয়া যায়, তাহলে তো খুব ভালো হবে।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে স্ট্রাইকার সংকট বরাবরই। এ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা?

জেমি: আমাদের ভালো তরুণ স্ট্রাইকার আছে। তাদের পর্যাপ্ত পরিচর্যা দরকার। তারা সময় অনুযায়ী কোচিং পায় না। যখন তাদের বেড়ে ওঠার সময়, তখনই পরিচর্যাটা বেশি দরকার। তবে লিগের কাঠামোতে বদল না এলে কিংবা যুব ফুটবলের উন্নয়ন না হলে ফুটবল এগিয়ে নেওয়া কঠিন।

প্রশ্ন: এবার তো ঢাকা লিগে চার বিদেশি খেলবে...

জেমি: হ্যাঁ, সেটাই বলছি। এর বদল না হলে স্থানীয়রা সুযোগ পাবে কী করে।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের দায়িত্বের শুরুর সঙ্গে এখনকার অবস্থার পার্থক্য করবেন কিভাবে?

জেমি: বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব আমি উপভোগ করছি। যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম, আর এখনকার অবস্থা বলতে গেলে অনেক উন্নতি হয়েছে। খেলোয়াড়দের অনেক কিছুই বদলে গেছে। আমি তো মনে করি আমরা উন্নতির পথে আছি। আমি চাই বাংলাদেশের হারানো গৌরব ফিরে আসুক। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হোক।

প্রশ্ন: দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেছে, বাংলাদেশে কাজ করে কেমন লাগছে?

জেমি: শুরু থেকে মানিয়ে নিয়েছি। পরিবেশ, আবহাওয়া কিংবা খাবার-দাবার যাই বলেন না কেন, আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

প্রশ্ন: পরিবারের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে আপনার। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা কী?

জেমি: আসলে আমি যখন থেকে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন থেকেই আমার পরিবার বাংলাদেশের সমর্থক। তাদের কাছে এটা নতুন দল। আমার জন্যই বলতে পারেন তারা বাংলাদেশের সমর্থক। নিশ্চয়ই আমি তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে কাটানো মুহূর্ত ভাগাভাগি করব। ভবিষ্যতে হয়তো তারা বাংলাদেশ সফরে আসতেও পারে।