‘জুলিও কুরি’ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও সিজারের শ্রদ্ধা

ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জুলিও সিজার। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনকালো রঙা টি-শার্টে লেখা ‘ফিফা লেজেন্ড’। ব্রাজিলের জার্সিতে তিনটি বিশ্বকাপ খেলা জুলিও সিজার তো ফুটবলের সত্যিকারেরই কিংবদন্তি। ইন্টার মিলানে শিরোপা-বৃষ্টিতে ভেজা ক্যারিয়ারের সুন্দরতম মুহূর্তগুলোর জন্যও তিনি স্মরণীয়। তবে সিজারের প্রতি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসা সম্ভবত বেশি তিনি ব্রাজিলিয়ান বলেই। বিশ্বকাপ এলে এদেশের মানুষ যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, সেটা সবারই জানা। অবসরে গেলেও তাই ব্রাজিলভক্তদের মনে অন্যরকম জায়গা জুড়ে আছেন ৪০ বছর বয়সী সাবেক গোলকিপার।

২০১৪ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতি টানা সিজারকে নিয়ে হঠাৎ কেন এত আলোচনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে? কারণ অবশ্যই আছে। টেলিভিশনের পর্দায় যার এক একটি সেভ দেখে শিহরিত হয়েছে বাংলাদেশে ফুটবলপ্রেমীরা, সেই সিজার এসেছেন বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাফুফের নানা আয়োজনের একটি শুভেচ্ছাদূত হিসেবে জুলিও সিজারকে বাংলাদেশে আনা।

‘ভিজিটর নোট’-এ স্বাক্ষর করছেন জুলিও সিজার। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনগতকাল (বুধবার) ঢাকায় পা রাখা সাবেক ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার একদিনের সফরের কার্যক্রম শুরুই করেছেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম স্মারক বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘুরে দেখার সময় ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী ও মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার।

বঙ্গবন্ধুর নাতি শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বাড়ির ভেতরের প্রতিটি জায়গা ঘুরে দেখিয়েছেন সিজারকে। বঙ্গবন্ধু কোথায় কীভাবে সময় কাটাতেন, রাজনৈতিক আলোচনা কীভাবে করতেন কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অবসর সময়টা কীভাবে কাটাতেন— সবকিছু বিস্তারিত জেনেছেন সাবেক ইন্টার তারকা। এরই এক ফাঁকে জানতে পারেন, ফুটবল খেলোয়াড় বঙ্গবন্ধুর কথা। স্বাভাবিকভাবেই সিজারের আগ্রহ আরও বাড়ে। যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ, তিনি একসময় ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন— ভাবতেই ভালো লাগা ছুঁয়ে গেছে সিজারকে।

সংবাদমাধ্যমে কথা বলছেন সাবেক ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনবঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে সংবাদমাধ্যমের কাছে সেটাই বললেন সিজার, ‘তিনি ছিলেন দারুণ এক নেতা, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আমি জানতে পেরেছি তিনি ফুটবল খেলতেন।’ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। চল্লিশের দশকে জাতির জনক ছিলেন মাঠ মাতানো স্ট্রাইকার। অধিনায়কের দায়িত্বও সামলেছেন সেসময়ের অন্যতম দেশসেরা এই ক্লাবের।

ফুটবল মাঠ ছাপিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ ‍সন্তান। কিন্তু স্বাধীন দেশে বেশিদিন থাকতে পারেননি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির এই বাসায় ঘাতকের বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সেই বাড়ি ঘুরে দেখার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সিজার, ‘এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার কাছে এটা আবেগময় মুহূর্ত। এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক অনেক ঘটনা, আবেগপ্রবণ ইতিহাস। সবকিছু মিলিয়ে আমার জন্য এটা ভীষণ আবেগপূর্ণ ব্যাপার। এখানে এসে আমি বুঝতে পেরেছি আসলে কী ঘটেছিল, কতটা কষ্টের তার (ববিকে দেখিয়ে) পরিবারের জন্য।’

‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’ বইটি সিজারের হাতে তুলে দেন ববি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেনবঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ছোটদের উপযোগী করে একটি জীবনগ্রন্থ সিরিজ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। নাম ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’। এই বইয়ের তিনটি সিরিজ সিজারের হাতে তুলে দেন ববি। বাংলাদেশে আসার আগেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতেন সিজার, তবে তার বাড়ি ঘুরে দেখে নতুন অনেক কিছু জানায় আগ্রহ আরও বেড়েছে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপারের, ‘তার (ববি) নানা, জাতির পিতার জন্য আমার ভালোবাসা। সে (ববি) আমাকে একটি বই দিয়েছে। বইটি পড়ে আমি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও অনেক বেশি জানার চেষ্টা করব।’

বিশ্ব শান্তি পরিষদ শান্তির জন্য ১৯৭৩ সালে ‘জুলিও কুরি’ পুরস্কারে ভূষিত করে বঙ্গবন্ধুকে। শান্তির ‘জুলিও কুরি’কে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করলেন আরেক জুলিও।