ক্লাসিকো দেল রিও দে লা প্লাতা। আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ের ফুটবল দ্বৈরথকে এ নামেই ডাকে লাতিন আমেরিকায়। লা প্লাতা নদীর দুই পাড়ের দেশের ফুটবল লড়াই অন্যকরম উত্তাপ ছড়ায়। দুই দেশের মুখোমুখি লড়াই মাঠের ফুটবল ছাড়িয়ে মর্যাদারও। যদিও এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি হলো বড্ড একপেশে। যেখানে আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত ফুটবলের সামনে আক্ষরিক অর্থেই উড়ে গেছে লা সেলেস্তেরা। লিওনেল মেসির আলোকিত পারফরম্যান্সে উরুগুয়েকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা।
আজ (সোমবার) ভোরে বুয়েনস এইরেসের এল মনুমেন্তালে নিজেদের সমর্থকদের সামনে গোছানো ফুটবলের প্রদর্শনীতে আর্জেন্টিনা প্রমাণ করলো কেন তারা লাতিন আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন। উরুগুয়ের রক্ষণে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন মেসিরা। যেখানে প্যারিস সেন্ত জার্মেই ফরোয়ার্ডের গোলে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়। এরপর স্কোরশিটে রোদ্রিগো দে পল ও লাউতারো মার্তিনেস নাম তুললে বড় ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আলবিসেলেস্তেরা।
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর আবারও চেনা ছন্দে আর্জেন্টিনা। এই জয়ে ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে আগের মতোই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। এক ম্যাচ বেশি খেলা উরুগুয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে। আর ১০ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ব্রাজিল।
মেসি তো বটেই, তবে দুই মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো ও দে পল আলাদা নজর কেড়েছেন। লো সেলসো গোটা মাঠ জুড়ে খেলেছেন এবং আক্রমণে গতি বাড়িয়ে গেছেন। অন্যদিকে বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার দে পল যেন আজ আরও কার্যকারি হয়ে উঠেছিলেন। নিজে এক গোল করেছেন, আরেকটি করিয়েছেন লাউতারোকে দিয়ে।
আর্জেন্টিনার উৎসব এখানেই থামেনি। বিরতিতে যাওয়ার আগেই ব্যবধান ২-০ করেন দে পল। বক্সের ভেতর থেকে লাউতারো গোলমুখে শট নিতে চাইলেও পায়ে লাগাতে পারেননি। তাতে বল পেয়ে যান দে পল। আতলেতিকো মাদ্রিদ মিডফিল্ডার নিচু শটে বল জড়িয়ে দেন জালে।
দ্বিতীয়ার্ধেও চলতে থাকে আর্জেন্টিনার দাপট। তৃতীয় গোল পেতেও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। ৬২ মিনিটে স্কোরশিটে নাম তোলেন লাউতারো। এই গোলেও আছে মেসির ছোঁয়া। তার বাড়ানো বলে বাঁ প্রান্ত থেকে দে পলের চমৎকার ক্রস খুঁজে নেয় লাউতারোকে। ফাঁকায় থাকা ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি।
উরুগুয়ের সব সুযোগই তৈরি হয় প্রতিআক্রমণ থেকে। অন্যদিকে বল পায়ে রাখা আর্জেন্টিনা প্রথম সুযোগটা পায় ২৬ মিনিটে। দে পলের ক্রস ছোটবক্সের সামনে থেকেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লাউতারো। তবে ৩৪ মিনিটে স্বাগতিকরা গোল পাওয়ার দাবিদার ছিল। মেসির বাড়ানো চমৎকার পাস ফাঁকায় পেয়ে যান লো সেলসো। সামনে কেউই ছিলেন না। উরুগুইয়ান গোলকিপার মুসলেরাকেও ফাঁকি দিলেন। ততক্ষণে কয়েকজন ডিফেন্ডার চলে এলে এই মিডফিল্ডার যে শটটি নিলেন, লাগলো বারের ঠিক নিচের দিকে। বল মাটিতে আঘাত করলেও গোললাইন পার না হওয়ায় মাথায় হাত এল মনুমেন্তালে উপস্থিত স্বাগতিক দর্শকদের।
তবে মিনিট চারেক পর আর আক্ষেপে পুড়তে হয়নি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। মেসির গোলে এগিয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা। আর বিরতিতে যাওয়ার আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দে পল। এরপর লাউতারো স্কোরশিটে নাম তুললে নিশ্চিত হয়ে যায় জয়।