৫০-এ ট্রেবলের স্বপ্ন বুনছে আবাহনী

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের হাত ধরেই আবাহনী ক্রীড়া চক্রের (বর্তমানে লিমিটেড) এগিয়ে চলা। সেই ক্লাবটি সময়ের বিবর্তনে আধুনিক ও অনন্য এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেখতে দেখতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবটি পা দিয়েছে গৌরবের ৫০তম বছরে। এমন মাহেন্দ্রক্ষণে আকাশি-নীল জার্সিধারীরাও চাইছে এই মৌসুমে ট্রেবল জিতে মাইলফলকের বছরটি স্মরণীয় করে রাখতে।

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই প্রতিযোগিতা ঘিরে আবাহনী লিমিটেডও বেশ তাতিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপ জিতে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য তারা। এখন প্রতিষ্ঠার ৫০তম বছরে ট্রেবল নিশ্চিত করতে পারলে তো কথাই নেই। সেটি হবে অনন্য এক অর্জন।

তাছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশি ফুটবলাররাও আলো ছড়ানোয় এই মৌসুমে প্রত্যাশার চাপ বেড়েছে বহুগুণ। তার ওপর প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত আবাহনীর রেকর্ডও সবচেয়ে উজ্জ্বল। সর্বোচ্চ ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন। প্রথম তিনটি লিগের শিরোপা জিতে তো হ্যাটট্রিকের কীর্তিও আছে।

এবার ৫০ বছর পূর্তিতে সপ্তমবারের মতো লিগ জিতে রেকর্ডটা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার হাতছানি। দলের সফল কোচ পর্তুগিজ মারিও লেমস বিষয়টি উপলব্ধি করেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এই বছরটি স্মরণীয় করে রাখতে। মনে করি আমাদের সেই সামর্থ্যও আছে। দলের সবাই উজ্জীবিত। আশা করছি শিরোপা উৎসব করতে পারবো।’

অবশ্য প্রত্যাশা করলেও একটা বিষয় ভাবতেই হবে। বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সাইফসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ করে লিগ জেতা সহজ নয়। বিষয়টি বেশ ভালোভাবে জানেন ৩৫ বছর বয়সী কোচ লেমসও। তবে কোনও চাপ নিচ্ছেন না তিনি, ‘আমাদের জন্য লিগের ট্রফি জেতা মোটেও সহজ হবে না। অন্যরা ভালো দল। তাদের সঙ্গে লড়াই হবে। তবে টানা দুটি ট্রফি জিতে ছেলেদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। যেহেতু লিগ লম্বা সময় ধরে চলবে, শেষ পর্যন্ত আমরা যদি নিজেদের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারি, তাহলে ট্রফি জেতা অসম্ভব কিছু নয়।’

দল কতটুকু উজ্জীবিত আছে তা অধিনায়ক নাবীব নেওয়াজ জীবনের কথাতেই পরিষ্কার। জীবন বলেছেন, ‘এবার আমাদের দলটি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ভালো মানের খেলোয়াড় রয়েছে। এরইমধ্যে আমাদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছি। সবাই মিলে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে লিগ শিরোপা জিততে পারবো। সেই লক্ষ্যেই মাঠে নামবো।’

৪-৩-৩ ছকে আবাহনীর মূলশক্তি ফরোয়ার্ড জোনে। রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা দানিয়েল কলিনদ্রেসের পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দোরিয়েন্তন রয়েছেন। এছাড়া মধ্যমাঠে আরেক ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগাস্তোর কথা না বললেই নয়। এই মৌসুমে দলের ঈর্ষণীয় সাফল্যে এদের ভূমিকা অনন্য। রক্ষণে ইরানের মিলাদ শেখ সোলায়মানিও কম দক্ষ নন। ইমন মাহমুদ-টুটুল হোসেন বাদশারা যোগ্য সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। সবার সম্মিলনে দলের সাফল্যের মুকুটে একের পর এক পালক যুক্ত হচ্ছে।

তবে দারুণ সম্ভাবনার এই মুহূর্তে দুই ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল ও দোরিয়েন্তনের চোট দলকে ভীষণ বেশ ভাবাচ্ছে। চোট রয়েছে সুশান্ত- ইমন-হৃদয়েরও(চিকিৎসার জন্য হৃদয়ের বেঙ্গালোরে যাওয়ার কথা আছে)। দলের ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু তার পরেও আশাবাদী কন্ঠে বলেছেন, ‘আবাহনী সবসময় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ে। এবার দুটি ট্রফি জিতেছি। লিগের ট্রফিও জিততে চাই। সেই মিশনে সবাই আছি। সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে খেলোয়াড়রা সচেষ্ট থাকবে। আর লিগের আগে সবাই সুস্থ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ দল নিয়েই মাঠে নামতে পারবো আমরা।’

ট্রেবল জেতার জন্য পুরো দলও একই লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুচ্ছে। যার ইঙ্গিত মিললো কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড কলিনদ্রেসের কথায়, ‘আবাহনীতে আমি ট্রফি জিততে এসেছি। এরইমধ্যে দুটি ট্রফি জেতা হয়েছে। এখন সবাই মিলে দলের জন্য ট্রেবল জিততে চাই। এটাই আমাদের এখন লক্ষ্য।’