রোনালদো দেখলেন তার উত্তরসূরি এসে গেছে!

আগের দিনই গুঞ্জন রটে যায় একাদশে রাখা হচ্ছে না রোনালদোকে। আগের ম্যাচে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়ার কারণে কোচের প্রতি এক প্রকার ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। এছাড়া গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে তার কাছ থেকে খুব একটা পারফর্ম্যান্স সেভাবে দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের শুরুর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু থেকে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রোনালদোকে মাঠে একাদশে না রেখে বড় ঝুঁকিটা নিয়েই ফেললেন ফেরনান্দো সান্তোষ। রোনালদোর জায়গায় বাজি হিসেবে তরুণ গন্জালো মাতিয়াস রামোস ছিলেন প্রথম পছন্দ। ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড শুরু থেকে খেলার সুযোগ পেয়ে যেন সবকিছু  তছনচ করে দিলেন! হ্যাটট্রিক ছাড়াও একটি এসিস্টে নিজের আগমনী বার্তা দিয়ে রাখলেন।

লুসাইলের আইকনিক স্টেডিয়ামে সবার দৃষ্টি ছিল ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল কেমন পারফরম্যান্স করবে। আর রোনালদো মাঠে নেমেই বা কতটুকু কি করবেন। শুরুতে রোনালদোর নাম একাদশে না দেখে সমর্থকরা হয়তো একটু হতাশই হয়েছেন। বিশেষ করে সিআর সেভেনের পারফরম্যান্স দেখার জন্য সবাই মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু রোনালদোর জায়গায় তরুণ রামোস মাঠে নেমে সেই অভাবটা পুরোপুরি ঘুঁচিয়ে দিলেন।

প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছেন রামোস। গ্রুপ পর্যায়ের দুই ম্যাচে উরুগুয়ে ও ঘানার বিপক্ষে বদলি নেমে অল্প সময় মাঠে কাটিয়েছেন। আর কোচের প্রথম পছন্দে এবার শুরু থেকে মাঠে নেমে হাজারো সমর্থকদের মন জয় করে নিলেন বেনফিকার একাডেমিতে বেড়ে ওঠা ফরোয়ার্ড।

১৭,৫১ ও ৬৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রামোস। এছাড়া অন্য এক গোলের পেছনে তার অবদানও কম নয়। এমন কৃতিত্ব যখন রামোস মাঠে করে দেখাচ্ছিলেন সাইড বেঞ্চে বসে রোনালদো তা অবলোকন করছিলেন। হয়তো ধরেই নিচ্ছিলেন পর্তুগাল তার ‘উত্তরসূরি পেয়ে গেছে!

বেনফিকার হয়ে চলতি মৌসুমে দারুণ ছন্দে আছেন ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার রামোস। পর্তুগালের শীর্ষ লিগে ১১ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। ২০২২ সালে নেশন্স লীগে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে সেভাবে খেলার সুযোগ পাননি। বিশ্বকাপে আজই শুরু থেকে খেলার সুযোগ পেয়ে দেখিয়েছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।

৭৪ মিনিটে রামোসের জায়গায় রোনালদো মাঠে নামেন। ততক্ষণে পর্তুগালের জয় অনেকটা নিশ্চিতই। তবে মাঠে নেমে রোনালদোর জালে জড়িয়ে দেওয়া বলে গোলের বাঁশি বাজেনি। অফসাইডের কারণে। তাতে অবশ্য দলের ফলে কোনও হেরফের হয়নি। রোনালদো গোল পাননি তাতে কি হয়েছে। রামোস যা করে দিয়ে গেছেন তাতেই যে দলের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত।

রামোস হ্যাট্রটিক করে সেই ১৯৬৬ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন। দ্বিতীয় পর্তুগীজ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব তার। এর আগে ৬৬ বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে পর্তুগালের হয়ে গ্রেট ইউসেবিওর এমন কীর্তি ছিল।

রামোসের এমন কীর্তির পর পর্তুগালের প্রতি প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেক গুণ। ২১ বছর বয়সী ফুটবলারের কীর্তিতে রোনালদোদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন যে বেশ ভালোভাবে বেঁচে রয়েছে। এমন ফুটবলই যে দেখতে চায় সমর্থকরা।