আবাহনী-মোহামেডানের আগুন বারুদে লড়াই

কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম মঙ্গলবার (৩০ মে) অন্যরকম এক ম্যাচের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং দীর্ঘদিন পর কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে। তাই ট্রফি জয়ী দলটির সঙ্গে শহরটিও বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকছে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালকে সামনে রেখে শহর শুধু নয়, পুরো দেশেই ঝিমিয়ে পড়া সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা হলেও সাজ সাজ রব। বিকাল সোয়া তিনটার ম্যাচকে ঘিরে দুই দলই কঠিন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। যে করেই হোক ট্রফি যে জেতা চাই!

আবাহনী ও মোহামেডানে সবশেষ কোনও শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১১ সালে কোটি টাকার  সুপার কাপে। আর ২০০৯ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও দেখা হয়েছিল দুই দলের। এক যুগ পর আবার দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে ট্রফির জন্য। 

ফেডারেশন কাপের রেকর্ড ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী নামবে শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে। অন্য দিকে মোহামেডান ২০০৯ সালের পর ফের এই শিরোপার স্বাদ নিতে উন্মুখ হয়ে আছে। তাদের সবশেষ শিরোপা ২০১৩ সালে, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে সুপার কাপ জিতেছিল।
 
মোহামেডানের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়ে তাই রোমাঞ্চিত আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমস, ‘যে ডার্বি ঘিরে এমন ইতিহাস, আবেগ এবং উত্তেজনা, তার মধ্যে তো রোমাঞ্চের উপস্থিতি থাকবেই। আমিও রোমাঞ্চিত। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের অংশ হতে পেরে সত্যিই ভাগ্যবান আমি।’

পাশাপাশি জয়ের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দিলেন লেমস, ‘আমরা ট্রফি ধরে রাখতে চাইছি। এর জন্য মাঠে নামবো। সবাই প্রস্তুত। সমর্থকদের আরও একটি ট্রফি উপহার দিতে চাই।’

লেমসের চাওয়া কেবল আক্রমণভাগ নয়, সব বিভাগেই নিখুঁত খেলবে তার দল, ‘ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। কিন্তু এটা ফাইনাল, এখানে মনোযোগ হারানোর কোনও সুযোগ নেই। আক্রমণ, রক্ষণ- সব বিভাগেই নিখুঁত হতে হবে আমাদের।’

আবাহনীর হয়ে লেমস পেয়েছেন একবার করে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ ট্রফির স্বাদ। এবারও অভিজ্ঞতার ঝুলিটা আরও ঋদ্ধ করতে চাইছেন।

এই ফাইনালের আগে মোহামেডানের বিপক্ষে সবশেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যানে আবাহনী তিনটি জয় ও দুটি ড্রয়ে এগিয়ে। সবশেষ ২০১৯ সালে লিগ ম্যাচে আকাশি-নীলদের বিপক্ষে জিতেছিল মোহামেডান।

লেমস অভিজ্ঞ কোচ হলেও মোহামেডানের আলফাজ আহমেদ তুলনায় কিছুটা নবীন। শফিকুল ইসলাম মানিকের জায়গায় প্রথমবারের মতো হেড কোচের দায়িত্ব পেয়েই দলকে ফাইনালে তুলেছেন। ফাইনালে প্রতিপক্ষকে শেষ আঘাতটি দিতে চাইছেন তিনি ট্রফি জিতে। 

মোহামেডান কোচ আলফাজ বলেছেন, ‘বসুন্ধরা কিংসকে হারানোর পরের ম্যাচগুলোতে আমরা যেভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছি, সেটাই আগামীকাল খেলবো। দল আত্মবিশ্বাসী, তবে আমাদের সাবধানী খেলা খেলতে হবে। আবাহনী অনেক বড় দল, ম্যাচে ৫০-৫০ সুযোগ আছে। যে ভালো খেলবে সেই জিতবে।’

সাদা-কালোরা যে একটি শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত, তা সাবেক তারকার কণ্ঠে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, ‘আমি কোচ হওয়ার পর একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছি। আমাদের শুরুটা ভালো ছিল না, কিন্তু আস্তে আস্তে দলে একটা পরিবর্তন এসেছে। আমি কোচ হিসেবে ভীষণ খুশি। আমাদের একটা শিরোপা দরকার। দলও শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত। হতে পারে এই শিরোপাই আমাদের ভবিষ্যতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ 

দুই দলের কোচের কথায় বোঝা যাচ্ছে, আগুন আর বারুদের লড়াই হতে যাচ্ছে এবার। শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জিতে আবাহনী শিরোপা ধরে রাখতে পারবে নাকি মোহামেডানের জয়গান হবে, তা ম্যাচ শেষে পরিষ্কার হবে।