গত বছর আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফ) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলছে তার ওপর। তারপরও নেপথ্যে থেকে ফুটবলের সঙ্গে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে সোহাগের স্ত্রী তাসমিয়া রেজওয়ানা নাইম বিক্রমপুর কিংসের হয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন। এর পেছনে সোহাগই কলকাঠি নেড়েছেন বলে গুঞ্জন আছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে স্ত্রীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আবার বাফুফে থেকে চাকরিকালীন প্রায় ১ কোটি টাকা সার্ভিস বেনিফিট দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন সোহাগ।
আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেখানে দ্বিতীয় বিভাগের দল বিক্রমপুর কিংসের প্রতিনিধি তাসমিয়া রেজওয়ানা। ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক সম্রাট মহিম তালুকদার আগেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘তাসমিয়া ভাবী আমাদের ক্লাবের সহ সভাপতি। সোহাগ ভাই শুরু থেকেই ক্লাবকে আর্থিক সাহায্য করে আসছে। তাই এবার ভাবীকে কাউন্সিলর করা হয়েছে।’
তবে এর পেছনে সোহাগ আছেন তা বুঝতে দেরি নেই অনেকের। সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু তো বলেই দিয়েছেন, ‘ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হওয়া সোহাগের স্ত্রী কীভাবে কাউন্সিলর হয়। ওনার তো সাংগঠনিক কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। ওই ক্লাবতো পরোক্ষভাবে সোহাগ চালায় বলেই শুনেছি। সোহাগ যখন নিষিদ্ধ হয়, ঠিক সেসময় থেকে ওর স্ত্রীর নাম আনা হয়। এখন শুনছি ওর স্ত্রী নাকি নির্বাচন করবে। সোহাগ আর্থিক কারণে ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। এখন স্ত্রীকে সামনে রেখে নেতিবাচক কাজ যে হবে না, সেটাই কে বলবে। এভাবে খারাপ লোক আশেপাশে থাকলে ফুটবল এগোবে কী করে।’
এদিকে বাফুফে-তে চাকরি করে ২৩ বছরে প্রায় কোটি টাকা সার্ভিস বেনিফিট দাবি করেছেন সোহাগ। যা ‘অতিরঞ্জিত’ বলছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার। বলেছেন, ‘উনি কোটি টাকা দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে তা ৩৫ লাখের বেশি হবে না। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
এমন খবর শুনে হাসানুজ্জামান বাবলু ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘সোহাগ আর্থিক অনিয়মে নিষিদ্ধ হয়ে দেশকে সারা বিশ্বের কাছে লজ্জায় ডুবিয়েছে। শুনেছি ও ফুটবলকে পুঁজি করে অবৈধভাবে অনেক অর্থ বানিয়েছে। আমার তো মনে হয়, ওর বিরুদ্ধে বাফুফের উচিত ছিল আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। দেশবাসীর কাছে ওর মুখোশ উন্মুক্ত করে দেওয়া। ও কোন মুখে আবার সার্ভিস বেনিফিট দাবি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আবার ফিফা থেকে সাসপেন্ড ও বাফুফে থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েও সোহাগ বিআইপি (বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স) নামের একটি সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিষিদ্ধ ব্যক্তি দেশের আরেক সেক্টরে অবাধ কাজ করে কীভাবে। নতুন সরকারের বিষয়টি দেখা উচিত।’