‘বাবা থাকলে যে কী খুশি হতেন’

প্রয়াত বাবা চান মিয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। বাবার মৃত্যুর তিন বছর পর লাল-সবুজ জার্সি গায়ে তুলেছেন একমাত্র ছেলে রেজাউল করিম বাবু। এবার অধিনায়কত্ব পেয়ে এশিয়ান গেমস বাছাই হকিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবাহনী লিমিটেডের এই ডিফেন্ডার। ক্যারিয়ারের দারুণ মুহূর্তে তাই প্রয়াত বাবাকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন তিনি।

বেঁচে থাকতে বাবাই চেয়েছিলেন ছেলে একসময় হকিতে নাম কুড়োবে। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে।

লাল সবুজ দলের হয়ে আগে খেলা শুরু হলেও এবারই প্রথম অধিনায়কের ঝান্ডা হাতে পেয়েছেন রেজাউল। বাবার অনুপস্থিতি তাই একটু বেশিই বিষণ্ন করছে তাকে।

বুধবার (৪ মে) রাতে ব্যাংককে যাওয়ার আগে বিষাদমাখা কণ্ঠে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘বাবা যখন মারা যান তখন আমি নবম শ্রেণিতে। তিনি সবসময় চাইতেন আমি জাতীয় দলে খেলবো। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবো। কিন্তু আমার এই পর্যন্ত উঠে আসাটা বাবা দেখে যেতে পারলেন না। অধিনায়ক হয়ে দেশকে নেতৃত্ব দেবো, এটা জানতে পারলে বাবা যে কী খুশি হতেন!’

৬৩ বছর বয়সে রেজাউলের বাবার মৃত্যু ছিল অস্বাভাবিক। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হয়ে দুষ্কৃতকারীর হাতে নিহত হন তিনি।

তার মৃত্যুর পর পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় মা রিজিয়া আক্তারের। বড় বোন পারভিন আক্তার জিমন্যাস্টিকসের কোচ হয়ে যা আয় করতেন তাতেই কোনোমতে চলতে হতো।

ধীরে ধীরে ফিরে আসে সচ্ছলতা। তবু বাবার অভাব যে অপূরণীয়। রেজাউল তাই আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সাভারের জিরানিতে নিহত হন তিনি। এ নিয়ে কত কী হলো। কম ভোগান্তি সহ্য করতে হয়নি। পরে সব সামলে নিতে হয়েছে। বড় বোন ও মা-ই আমাদের পরিবার আগলে রেখেছেন।’

ঈদের সময় প্রয়াত বাবাকে আরও বেশি মনে পড়ে বাবুর। বাবার সঙ্গে একসঙ্গে আর ঈদের নামাজ পড়া হয় না। তবে ক্যারিয়ারের সোনালী অধ্যায়ে তার শূন্যতা যেন আরও বেশি বিঁধছে বুকে।

এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে গতবার বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছিল।  এবার রেজাউল চাইছেন চ্যাম্পিয়ন হতে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কঠিন পণ করে এগোচ্ছেন সামনে।

সেটাই প্রকাশ করতে গিয়ে বললেন, ‘এবার চ্যাম্পিয়ন হলে ঠিক করেছি শিরোপাটা প্রয়াত বাবাকে উৎসর্গ করবো। আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে বাবার অবদানই অনেক।’