X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাংক থেকে আগামী অর্থবছরে দ্বিগুণ টাকা নিতে চায় সরকার

গোলাম মওলা
০৮ জুন ২০২০, ০২:৫৩আপডেট : ০৮ জুন ২০২০, ০৩:০১

ব্যাংক সরকার ব্যাংক থেকে চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নিতে চায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হয়েছিল। তখন অভ্যন্তরীণ খাত থেকে মোট ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করা হয়েছিল।

সূত্র বলছে, নতুন অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিবে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেওয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার।

অভ্যন্তরীণ ছাড়াও আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, রাজস্ব ঘাটতির চাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এমনিতেই রাজস্ব পরিস্থিতি ভালো ছিল না। এর সঙ্গে করোনা এসে আরও সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই সরকার ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়েছে।

এদিকে ব্যয় নির্বাহে প্রতিনিয়তই ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে বরং সরকারকে ঋণ দিতে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করছেন ব্যাংকাররা।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান পেক্ষাপটে সরকারকে ঋণ দেওয়াই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। এছাড়া এখন সরকারেরও ঋণ দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুধু মে মাসেই সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছর (২০১৮-১৯) শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণ ছিল এক লাখ ৮ হাজার ৯৬ টাকা। এতে করে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারের ঋণ ৩৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯২ কোটি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে বেসরকারি খাতের। এখানে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারবাহিকভাবে কমে যাওয়ার মানে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানো জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। আবার সঞ্চয়পত্র থেকেও সরকার ঋণ পাচ্ছে না। অথচ নিয়মিত ব্যয়ের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় প্রচুর ব্যয় হচ্ছে। এ অবস্থায় ঋণ করেই চলতে হচ্ছে সরকারকে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিপুল ঘাটতির কারণে পরে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। গত এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, যা ওই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬২ হাজার কোটি টাকা কম। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ শতাংশ কম।

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কূটনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে চীন-জার্মানির কৌশলগত সংলাপ
কূটনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে চীন-জার্মানির কৌশলগত সংলাপ
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল