X
বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৫ ফাল্গুন ১৪৩১

দেশে ‘জ্বালানি সুবিচারের’ দাবিতে ক্যাবের নাগরিক সংলাপ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
০১ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৬আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৬

বাংলাদেশে বর্তমান জ্বালানি কাঠামোর দুর্বলতা তুলে ধরে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রবিবার (৩০ জুন) রাজধানীর সিরডাপ’র এ টি এম শামসুল হক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে এ আহ্বান জানান তারা। ‘ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ও কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা জাতীয় সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন ২০১০ দ্বারা জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ৩৪ ধারা পরিবর্তন দ্বারা গণশুনানি রোধ করে মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার নিজের হাতে নেওয়ায় সরবরাহ ব্যয় ও মূল্যহার উভয়ই অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্যহারে ভোক্তার জ্বালানি প্রাপ্যতা বিপন্ন এবং ভোক্তা জ্বালানি অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।  এই পরিস্থিতি জনগণকে চরম জ্বালানি দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের কারণে জ্বালানি খাতে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ চেইনের পুরোটাই এককভাবে নিজের হাতে থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির পরিচালক। আবার সরকারের দুর্নীতির অংশীদার হিসেবে যখন ব্যক্তি মালিকানা খাত এগিয়ে আসে সেখানেও কার্যত কোন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার অংশগ্রহণ হয় না, হয় লেনদেন ও আঁতাতের মাধ্যমে। ফলে একচেটিয়াবাদের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেটওয়ার্কের একাধিক গবেষণা ও সমীক্ষায় এই সত্যটি উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, একসময় বলতাম— খাম্বা তৈরি হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ নাই। আর এখন বলি— বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে, কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি নেই। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিল দিতে হয়। যেমন বাংলাদেশের সামিটসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই এ সুবিধা নিচ্ছে। যদিও এইভাবে সামিট এখন সিঙ্গাপুরের (আন্তর্জাতিক) প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট- এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পরিবেশ রক্ষা তথা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের জ্বালানি রূপান্তর করা অতি প্রয়োজনীয়। আর এ ক্ষেত্রে কয়লার ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের দিকে ঝুঁকিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সোলার সিস্টেম প্লানিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা'র সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমরা অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করছি। ফলে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের কতটুকু দরকার, আর কতটুকু তৈরি করবো, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা দরকার। কিন্তু সেই বিষয়ে অসামঞ্জস্যতা থাকার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, একজন বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিয়ে সিঙ্গাপুরের অর্থের পাহাড় গড়ছে। আর আমরা জ্বালানির অবিচারে ভুগছি। (বিইআরসি) কমিশনকে অবজ্ঞা করে, ইচ্ছে মতো জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দীন খান ক্যাবের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, স্রেডার ( সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আস্থাভাজনদের তারা নিয়োগ দেয়। যার কারণে স্রেডার কার্যক্রম নিয়ে কেও অভিযোগ করছে না।  কিন্তু স্রেডার রিনিউয়েবল এনার্জি (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে  না। কারণ স্রেডার মতো এতো ছোট্ট পরিসরে এতো বড় একটা ক্ষেত্রে কাজ করা সম্ভব নয়। তাই, এক্ষেত্রে তাদের জেলা পর্যায়েও শাখা দরকার। অর্থাৎ তাদের কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে গড়ে তোলা দরকার।

ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, শুধু ক্যাবের এই সংলাপের মাধ্যমে যে এই জ্বালানি রূপান্তর নীতি কার্যকর হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। তবে, আমাদের একটা আশার কথা হলো- বিগত দিনে ক্যাবের পক্ষ থেকে যে মামলা করেছি তাতে সফলতা পেয়েছি। অর্থাৎ আদালতকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে- আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করছি। তাই, আমরা এই আন্দোলনেরও সফলতা পাবো। এক্ষেত্রে সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

এরপর মুক্ত আলোচনায় অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানির সুবিচার না হলে জনগণের অধিকার সংরক্ষিত হবে না। তাই, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্যে সহজে ও ন্যায্যমূল্যে ভোক্তা যাতে বিদ্যুত-জ্বালানি পায়, সেটাই আমাদের দাবি।

তিনি আরও বলেন, জনগণ সরকারের জন্য কাজ করে। আমরাও জনগণের কথা বলি। তাই, আমাদের উদ্দেশ্য এক। আমরা একের অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নই। তবে, সরকারের কিছু কাজকে আমরা অন্যায্য মনে করি। তাই আমাদের এই প্রতিবাদ। যেমন, সরকার কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মেয়াদ আবার ৫ বছর বাড়িয়েছে। কিন্তু এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই বিইআরসির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করা হোক। তাই, আমাদের দাবিকে যাতে সরকার বিবেচনায় নেন, সেটাই আমাদের আহ্বান।

/এএইচএস/ইউএস/
সম্পর্কিত
রাজশাহী-রংপুর পেট্রোল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
আকস্মিক পেট্রোল পাম্প ধর্মঘটে ভোগান্তি
উচ্ছেদের প্রতিবাদে উত্তরের ১৬ জেলার পেট্রোলপাম্প বন্ধ ঘোষণা
সর্বশেষ খবর
শেষ মুহূর্তের গোলে বায়ার্ন ষোলোতে, মিলানের বিদায়
চ্যাম্পিয়ন্স লিগশেষ মুহূর্তের গোলে বায়ার্ন ষোলোতে, মিলানের বিদায়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
পার্ক ঘেরাওয়ের পর সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন গ্রেফতার
পার্ক ঘেরাওয়ের পর সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন গ্রেফতার
ঢামেকে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেকে কারাবন্দীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন শফিকুল আলম
সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন শফিকুল আলম
দুদক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো কাজী সায়েমুজ্জামানকে
দুদক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো কাজী সায়েমুজ্জামানকে
উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা, পাল্টে গেছে শাহজালালের গ্রিন চ্যানেলের দৃশ্যপট
উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা, পাল্টে গেছে শাহজালালের গ্রিন চ্যানেলের দৃশ্যপট
নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ
নতুন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ
সংঘর্ষে উত্তাল কুয়েট, আহত ৩০
সংঘর্ষে উত্তাল কুয়েট, আহত ৩০