X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাপে’ থাকায় চুপ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক

গোলাম মওলা
১৩ মার্চ ২০১৬, ২০:৩৯আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৬, ২০:৪১

বাংলাদেশ-ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে, এমন ধারণা থেকে টাকা চুরির ঘটনা গোপন রেখে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেও চাপের মুখে থাকায় ‘চুপ’ ছিল কর্তৃপক্ষ।
শুধু তাই নয়, ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকেও অন্ধকারে রাখা হয়। তাকে জানানো হয় ঘটনার এক সপ্তাহ পরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপরই দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিশ্বে ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে অনেক বড় ঘটনা বলা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা চুরি যাওয়ার বিষয়টি ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকতার্রা জানলেও গভর্নরকে জানানো হয় এক সপ্তাহ পরে। তিনি যখন এই ঘটনা জানতে পারেন, তখন রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনা সরকারকে জানানোর মতো পরিবেশ ছিল না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন কয়েকটি ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে কিছুটা চাপের মুখে ছিল।’

প্রসঙ্গত, গেল বছরের শেষের দিকে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং কয়েকজন শীর্ষ কর্মকতার্কে নিয়োগ-অপসরণ সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ মহল চাপে ছিল।

যদিও ড. আতিউর রহমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর থেকে ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব প্রবল আকার ধারণ করে। তার আমলে হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কাকারিসহ নানা ধরণের কেলেঙ্কারি ঘটে। কিন্তু গেল বছরের শেষের দিকে হঠাৎ করে কঠোর হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মালিকানায় থাকা ফারমার্স ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসরণের উদ্যোগ নেয়। এসব কারণে বিভিন্ন মহলের চাপ আসতে থাকে। এমন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে আলোচিত এই ঘটনা সরকারকে জানানো হয়নি।

ঘটনা ঘটার এক মাসেরও বেশি সময় পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিষয়টি জেনেছেন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে। একইভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. এম আসলাম আলমকে জানানো হয়নি। যদিও ঘটনা ঘটার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নিধারণী পর্যায়ে তিনটি বৈঠক হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ড. এম আসলাম আলম বলেন, ‘অর্থ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে ৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভা হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা হয়েছে। কোনও সভাতেই বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এই তিন বৈঠকের কোনওটিতেই বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল সরকারকে জানানো। এ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।’

এম আসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটির দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে কোনও সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরো সিস্টেমে দুর্বলতাসহ দক্ষ জনবলের অভাব ছিল। যারা আছেন তাদের সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়নি।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত বাংলাদেশের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে লোপাট হওয়ার বিষয়টি সরকারকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে তিনি একটি বিবৃতি দেবেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রবিবারই তার একটি সভা রয়েছে। সেই সভার পর সন্ধ্যায় বা সোমবার সকালে বিবৃতি দিয়ে তিনি এ ব্যাপারে জানাবেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘বিষয়টি সরকারকে কেন জানানো হয়নি, তা পরিষ্কার করে শিগগিরই গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হবে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে এখনও আইনি সহযোগিতা চায়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সময় তিনি এ তথ্য জানান। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের তদন্তের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে সহায়তা চায়নি। তবে আমরা তাদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।’

/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
বিমানযাত্রীর পকেট থেকে জ্যান্ত সাপ উদ্ধার
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
ডু প্লেসি ঝড়ে গুজরাটকে পাত্তা দিলো না বেঙ্গালুরু
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
দোহায় হামাসের কার্যালয় বন্ধের চিন্তা করছে কাতার
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে মিশরের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে