বছর ঘুরে ফিরে এলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। উৎসবকে সমানে রেখে কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এর রেশ পড়েছে পুরান ঢাকার মার্কেট ও শপিংমলগুলোতেও। চাহিদা অনুযায়ী পোশাক ও প্রসাধনী কিনছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী জমে ওঠেনি পূজার বিকিকিনি।
রাজধানীর সদরঘাট, ইসলামপুর ও লক্ষ্মীবাজার এলাকার শপিংমল ও মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পূজা উপলক্ষে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঞ্জাবি, ধুতি, শাড়ি, থ্রি-পিস দেখাতে ও দামাদামি করে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। পোশাকের দোকান ছাড়াও জুতা, গহনা, কসমেটিকসের দোকানে ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের পোশাকের দোকানে ভিড় একটু বেশি।
সদরঘাটের গ্রেটওয়াল মার্কেটের লেভেল-২ এর দোকানগুলোতে নারী ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক সাজানো রয়েছে। বিক্রেতারা জানান, এবার নরীদের গাউনের চাহিদা বেশি। এর মধ্যে আলিয়া কাট, আফগানি, বার্বি গাউন ও চিকেন গাউন উল্লেখযোগ্য। এগুলোর দাম দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিসেরও চাহিদাও আছে। মান-ভেদে থ্রি-পিস ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
মিথিলা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, ‘যেকোনও উৎসবে নারী ও শিশুদের পোশাকের চাহিদা বেশি থাকে। শিশুদের পোশাকে তেমন ভিন্নতা না থাকলেও প্রতি বছরই নারীদের পোশাকে ভিন্নতা আসে। এবার গাউনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে। তবে আমাদের আশানুরূপ ক্রেতা নেই।’
গ্রেটওয়াল মার্কেটে কথা হয় সাথী দেবনাথ ও উজ্জ্বল দেবনাথ দম্পতির সঙ্গে। সাথী বলেন, ‘পূজা মানেই আনন্দ। সেই আনন্দকে বাড়িয়ে নিতে নতুন পোশাক কিনতে আসা। আমরা শাড়ি, প্যান্ট, টি-শার্ট কিনেছি। এখন থ্রি-পিস পছন্দ করছি। সবকিছুর দামই বেশি। তারপরও পূজার জন্য কেনাকাটা করতেই হবে, তাই মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’
ছেলেদের পোশাকের দোকানগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। পাঞ্জাবির দোকানে তরুণদের ভিড় বেশি। কাপড় ও রঙ অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বড়দের জন্য টি-শার্ট ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা, শার্ট ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা, গ্যাবার্ডিন ও জিন্স প্যান্ট ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সদরঘাটে পাঞ্জাবির জন্য প্রসিদ্ধ শরীফ মার্কেট হাজী ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী হাজী রফিকুল বলেন, ‘পূজার সময় ছেলেদের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকে। তবে এ বছর ক্রেতার সংখ্যা কম। সবকিছুর দাম বেড়েছে। সে হিসেব পাঞ্জাবির দামও বেড়ে গেছে। তারপরও আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।’
এদিকে জুতার দোকান ও শোরুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। এছাড়া লক্ষ্মীবাজারে কসমেটিকস ও ইমিটেশনের জুয়েলারির দোকানেও ভিড় দেখা গেছে। ইমিটেশনের কানের দুল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। নাকফুল ও আংটি মিলছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে এবং গলার হার ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
বিচিত্রা কসমেটিকসের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ কোনও উপলক্ষ লাগে না, সারা বছরই বিক্রি চলে। পূজার কারণে কিছু বেচাকেনা বেড়েছে।’
লক্ষ্মীবাজারে কথা হয় রিতা সাহা নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কসমেটিকস আর ইমিটেশনের গহনা লাগেই। এছাড়া ইমিটেশনের গহনা মেয়েদের সব সময়ের সঙ্গী। আমি নিজের ও বোনের জন্য কানের দুল, গলার হার নিয়েছি।’
পঞ্জিকা অনুযায়ী আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে সেদিন। পরদিন ১০ অক্টোবর সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার। অষ্টমী ও নবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
