X
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
১০ আষাঢ় ১৪৩২

ভোক্তা ব্যয় হ্রাসে শিল্প উৎপাদন ও খুচরা বিক্রিতে মন্দা: অর্থনীতির বাস্তবচিত্র

গোলাম মওলা
২৪ জুন ২০২৫, ১৬:০০আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ১৬:০০

দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ধরে ৯ শতাংশের ঘরে আটকে থাকায় মানুষের হাতে খরচ করার মতো অর্থ থাকছে না। পাশাপাশি আয় না বাড়ায় পরিবারগুলো প্রয়োজনের বাইরে ব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারের দোকান পর্যন্ত সবখানেই। অর্থনীতিতে এই স্থবিরতা শুরু হয় গত বছরের ৫ আগস্টের আগে থেকেই। তবে ৫ আগস্টের পর বিনিয়োগে আস্থার ঘাটতি আরও বেড়ে যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা এখন দুর্বল। এই বাস্তবতায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী মাসরুর রিয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেক দুর্বল— যার মূল কারণ দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, তারা সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছে।’  তিনি আরও বলেন, ‘রেমিট্যান্স প্রবাহেও বছরখানেক স্থবিরতা ছিল, যার ফলে রেমিট্যান্সনির্ভর ভোগ ব্যয় কমে যায়। সব মিলিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদা এখন দুর্বল। এই বাস্তবতায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় মানুষ পণ্য কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে খুচরা বিক্রিতে ব্যাপক মন্দাভাব চলছে। ব্যবসায়িক বেচাকেনা কমে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতাও।

বাজারে ক্রেতা কম, বিক্রিতে ধস

রাজধানীর নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, গুলিস্তান, মিরপুর-১, কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে— বেচাবিক্রি আগের মতো হয় না। এমনকি চলতি বছরের দুটি ঈদেও বিক্রি আশানুরূপ হয়নি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চাহিদা কমেছে প্রায় সব ধরনের পণ্যে। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য— যেমন পোশাক, গৃহস্থালি সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্সে বিক্রি কমার হার সবচেয়ে বেশি। দোকানিরা বলছেন, দিনের পর দিন বিক্রি না হওয়ায় অনেকেই দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা জানান, ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজি) খাতের বিক্রি কমে গেছে। খাবার, পানীয়, দুধ, চা, সাবান-শ্যাম্পুসহ বেশিরভাগ ক্যাটাগরিতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রির পতন দেখছে। কোম্পানিগুলোর ভাষ্য, ভোক্তারা এখন কম দামের ব্র্যান্ড ও ছোট প্যাকেজ বেছে নিচ্ছেন।

এতে দেশে ভোক্তা চাহিদা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে ভোগ্যপণ্য ও নির্মাণসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘ভোক্তারা এখন হয়তো বড় পণ্যের বদলে ছোট পণ্য কিনছেন। পাঁচ লিটারের তেলের বদলে দুই লিটারের বোতল নিচ্ছেন, ফ্যামিলি সাইজ পাউরুটির বদলে ছোটটা বেছে নিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয়— মানুষ কষ্টে আছে, ব্যয় কমাচ্ছে।’

মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘরে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.০৫ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসে ছিল ৯.১৭ শতাংশ।

এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.৫৮ শতাংশ এবং অ-খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনও নাগালের বাইরে, ফলে পরিবারের বাজেটকে সংকুচিত করে ফেলছে।

বেসরকারি ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে সাশ্রয়ী হতে বাধ্য করেছে। কেবল প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যসব খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে ভোক্তারা।

শুধু তাই নয়, ঈদের বাজারে এবার কেনাকাটার প্রবণতা ধীরগতির ছিল। মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান ক্রেতারা সীমিত কেনাকাটার মাধ্যমে সঞ্চয়ী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। পোশাকের পাশাপাশি কোরবানির পশুর বাজারও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি, যার কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছেন।

পোশাক ও কোরবানির পশুর ব্যবসায়ও মন্দাভাব

সাধারণত রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে কেনাকাটার ধুম পড়ে। কিন্তু এ বছর সেই দৃশ্যটি চোখে পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এবারের রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদের বাজারে মন্দাভাব লক্ষ করা গেছে। দেশের অর্থনীতিতে ঈদের সময় প্রায়শই যে বড় চাহিদা দেখা যেতো, তা এবার ছিল অনেকটাই নিস্তব্ধ ছিল। রফতানি ও অন্যান্য খাত ধীরে অগ্রসর হলেও ঘরোয়া বাজারে কেনাকাটার মাত্রা কমে গেছে।

পোশাকের বাজারে বিক্রি কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা

রাজধানীর গাউছিয়া, নিউ মার্কেট ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সসহ বড় বড় শপিং মলের দোকানিরা জানাচ্ছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এবার মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের আগ্রহ কমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ঈদের পোশাক বিক্রি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। অনেক ক্রেতা মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা বাড়লেও কেনাকাটা কম থাকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর উদ্যোক্তারা বলছেন, ঈদে ব্র্যান্ড পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। তবে ক্রেতারা খরচ কমিয়ে সীমিত কেনাকাটায় সন্তুষ্ট হচ্ছেন। আগের মতো একসঙ্গে একাধিক পোশাক কেনার বদলে এবার বেশিরভাগ ক্রেতাই একটি বা দুটি পোশাক কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব এই প্রবণতার অন্যতম কারণ।

কোরবানির ঈদ: পশু বিক্রিতে বড় ক্ষতি খামারিদের

চলতি বছর দেশে ঈদুল আজহায় মোট কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৪টি কম। গত ঈদুল আজহায় পশু বিক্রি হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ ২১ হাজার ২২৮টি।

এত বড় সংখ্যক পশু অবিক্রীত থাকায় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। হাটগুলোতে বেশির বড় গরু বিক্রি হয়নি। অনেক খামারি ঋণ নিয়ে, চড়া দামে খাবার খাইয়ে এই ব্যবসা করছেন। তাই তাদের ক্ষতির পরিমাণও বেশি।

মানিকগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের কোরবানির বাজারে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। বড় গরুর চাহিদা উল্লেখযোগ্য কমে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ হলো—গত বছরের ‘ছাগলকাণ্ড’ এবং ব্রাহ্মা জাতের গরু নিয়ে বিতর্ক, যা দেশজুড়ে আলোচনার খোরাক ছিল। এর ফলে বিত্তবান ক্রেতারা বড় গরু কেনা থেকে সরে এসেছেন।

খামারিরা জানান, এই পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।

ফার্নিচার শিল্পে মারাত্মক সংকট

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গভীর সংকটে পড়েছে দেশের ফার্নিচার শিল্প। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। বিশেষ করে সরকারি ও করপোরেট কেনাকাটা বন্ধ থাকায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান স্পষ্ট।

ঢাকার বেগম রোকেয়া সরণির ফার্নিচার পল্লীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ‘কালাম ফার্নিচার’-এর সিনিয়র সেলসপারসন রহমতুল্লাহ জানান, আগে মাসে ৪-৫ লাখ টাকার বিক্রি হলেও এখন তা দুই লাখের নিচে চলে এসেছে।

দামের কারণে ক্রেতারা সেগুন কাঠের পরিবর্তে সস্তা বোর্ডজাত ফার্নিচারে বেশি আগ্রহী। ‘দি ন্যাশনাল ফার্নিচার’-এর ম্যানেজার মোহাম্মদ শাজাহান জানান, বিক্রি আগে মাসে গড়ে ২০ লাখ ছিল, এখন মাত্র ৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্কশপগুলোতেও কর্মী কমে গেছে। ‘আয়শা ফার্নিচার’-এর মালিক নয়ন মিয়া বলেন, আগে চার জন কাজ করতো, এখন দুজন। অর্ডারও কমে গেছে।

ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান সংকট করোনাকালের থেকেও বড়। আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ক্রেতারা অর্থ ব্যয় থেকে বিরত থাকছেন। নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না।’

হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে মন্দা

জমজমাট পরিবেশে মুখরিত পর্যটন রিসোর্টগুলো এখন সুনসান। রিসোর্টগুলোর ব্যবসা খুবই মন্দার কবলে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জের পদ্মা পাড়ের রিসোর্ট মালিকরা বলছেন— নিরাপত্তা সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লোকজন বিনোদনের জন্য বের হচ্ছে না ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ধানমন্ডির সান্তুর রেস্টুরেন্ট আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর আর চালু হয়নি। ফেসবুকে রেস্তোরাঁ ও আসবাবপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রতিদিনই দেখা যায়, যা ব্যবসায় সংকটের পরিচায়ক।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানায়, ৫ আগস্টের পর রেস্তোরাঁ ব্যবসা অন্তত ৩০ শতাংশ কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা ও মূল্যস্ফীতি ব্যবসার বড় বাধা। অনেক মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, দেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা বাড়লেও বর্তমানে এই খাত বিপর্যস্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাতের বেলা ক্রেতা কমায় লাভে বড় ধাক্কা লেগেছে। শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য খরচ বেড়ে ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জানান, তার তিনটি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনেক ব্যবসায়ীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে মন্দা

রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে চাহিদা কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। রাজধানীর তেজগাঁও, মনিপুরীপাড়া ও মিরপুরের শোরুমগুলোতে আগের মতো ক্রেতা নেই। আগে যেখানে মাসে ৫-৭টি গাড়ি বিক্রি হতো, এখন সেটা ৩-৪টিতে নামছে। ক্রেতারা এখন বেশি দামের গাড়ির বদলে কম দামের গাড়ি খুঁজছেন।

জানতে চাইলে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিক্রি ৪০ শতাংশ কমেছিল, তবে এখন কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্রেতা দেশের বাইরে থাকায় এবং অর্থপাচারের প্রভাবেও টাকার পরিমাণ কমে গেছে। তিনি আশা করেন, নির্বাচিত সরকার ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরলে মানুষের আস্থা ও বিনিয়োগ বাড়বে, সেইসঙ্গে গাড়ির চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে।

এমসিসিআই ও পিইবি’র ভাষ্য

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) বলছে, এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণের গতি কমেছে। পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স (পিএমআই) সূচক ৮.৮ পয়েন্ট কমে ৫২.৯ হয়েছে— যা গত অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। মার্চে এ সূচক ছিল ৬১.৯। অবশ্য গত মে মাসে দেশের অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে গতি ফিরেছে। বিশেষ করে কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে গতিশীলতা বেড়েছে।  তবে নির্মাণ খাত স্থবির অবস্থায়ই রয়েছে। এছাড়া মে মাসে নতুন ব্যবসা সূচক এবং কর্মসংস্থান সূচক আবারও সংকোচনে ফিরে গেছে— যা ভবিষ্যতে অর্থনীতির গতিকে সীমিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নির্মাণ খাতে স্থবিরতা

নির্মাণ খাতের স্থবিরতাকে অর্থনৈতিক গতিশীলতায় অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, কৃষি ও উৎপাদন খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি এবং সেবা খাতের স্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতিতে একটি আশার বার্তা হলেও নির্মাণ খাত ও কর্মসংস্থান সংকোচন অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধারে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) জানায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর রড উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রডের চাহিদা হঠাৎ কমে গেছে। উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ঝুঁকিতে কর্মসংস্থান

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। বছরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ৮ লাখ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালায় প্রভিশনিং বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যা নতুন ঋণ বিতরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির সব খাতে

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যার ফলে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণের অভাবে সংকটে পড়ছেন।

সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা

২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১.০৪ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়— যা তারল্য সংকটকে আরও বাড়াবে। এতে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণের সুযোগ সংকুচিত হবে এবং সুদহার চড়াই থাকবে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের উদ্বেগ এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকট শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত করছে। ফলে আগামীতে আরও ঋণখেলাপির আশঙ্কা রয়েছে।’ বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, পোশাক খাতেও ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিন মাসে খেলাপি ঘোষণা নিয়ে শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়ে শিগগিরই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

/এপিএইচ/এমওএফ/
টাইমলাইন: শিল্প খাত
২৪ জুন ২০২৫, ১৬:০০
ভোক্তা ব্যয় হ্রাসে শিল্প উৎপাদন ও খুচরা বিক্রিতে মন্দা: অর্থনীতির বাস্তবচিত্র
সম্পর্কিত
সিনেমা: হাদ আছে হু আছে, দুধ-বাটি নাই!
রিকন্ডিশনড গাড়ির বাজারে খরা, নির্বাচনের অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা
ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, নির্মাণ খাতে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা
সর্বশেষ খবর
অন্নদানগরে রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব
অন্নদানগরে রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব
বাংলাদেশ থেকে যেভাবে গুগল পে ব্যবহার করবেন
বাংলাদেশ থেকে যেভাবে গুগল পে ব্যবহার করবেন
অবশেষে আসছে ‘অন্যদিন...’
অবশেষে আসছে ‘অন্যদিন...’
ঘরে বসে অনলাইনে আয়ের নামে প্রতারণা, চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৫
ঘরে বসে অনলাইনে আয়ের নামে প্রতারণা, চীনা নাগরিকসহ গ্রেফতার ৫
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধার সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
কাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
দোহাগামী বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণাকাতারের উদ্দেশে ছাড়া ফ্লাইট নামলো ওমানে, আবার ফিরছে ঢাকায়
খিলক্ষেতে রেলের জায়গায় মন্দিরের সাইনবোর্ড, অপসারণের দাবি স্থানীয়দের
খিলক্ষেতে রেলের জায়গায় মন্দিরের সাইনবোর্ড, অপসারণের দাবি স্থানীয়দের
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
দেশে প্রথমবারের মতো গুগল পে চালু হচ্ছে আজ, যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে