X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘কারখানায় দুর্ঘটনা হলেই মালিকদের দোষারোপ করা হয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৪৯আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৪৯

‘কারখানায় দুর্ঘটনা হলেই মালিকদের দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যেসব সংস্থা লাইসেন্স দিয়ে থাকে তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সব শিল্প কারখানা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন পদ্ধতি এবং চেকলিস্টের ওপর ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাবু বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আলাদা কেমিক্যাল পল্লি গঠিত হলে চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনা ঘটতো না।’

পোশাক শিল্পের মতোই অন্য খাতগুলোকেও নিরাপদ করে তুলতে দেশব্যাপী পরিদর্শন কার্যক্রমে এফবিসিসিআই’র সদস্যভুক্ত ৮০টি চেম্বার ও ৪০৬টি অ্যাসোসিয়েশন সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। এ সময় তিনি কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রফতানিমুখী শিল্পের সঙ্গে অন্য শিল্পের শুল্ক বৈষম্য দূর করতে এফবিসিসিআই উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বাস দেন।

তবে এ পরিদর্শন কার্যক্রমে পুরান ঢাকার কোনও কোনও কারখানা টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোতালেব। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। কারণ, ঘিঞ্জি এলাকা। আমরা চৌবাচ্চায় পানি আর বালতিতে বালু দিয়ে সেমি কমপ্লায়েন্স করার চেষ্টা করছি। এই পরিদর্শন হলে কেউ টিকবে না। করোনায় সরকারের দেওয়া প্রণোদনা আমরা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা পাইনি। দোকানভাড়া ও শ্রমিকদের বেতন দিতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ জানান, বিডার এ পরিদর্শনে বেসরকারি খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি আগে মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ, পরিদর্শন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি সব কারখানা পর্যবেক্ষণ শুরু হচ্ছে।’ ওই সময় কারখানা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে সব ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কারখানার নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে অনেকগুলো সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। বাংলাদেশ ইনভেস্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) সেফটি সেল স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ান স্টপ সার্ভিস পেলে উদ্যোক্তাদের হয়রানি কমার পাশাপাশি নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‌‘এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিল্প খাত উপকৃত হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি এম এ মোমেন। তিনি বলেন, ‘পরিদর্শনের চেকলিস্ট দেখে উদ্যোক্তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শিল্প মালিকদের সহায়তা করার জন্যই এই উদ্যোগে অংশীদার হয়েছে এফবিসিসিআই। এই পদক্ষেপ সফল হলে তৈরি পোশাকের মতোই দেশের সব শিল্প নিরাপদ হবে। যা বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম বাড়াবে, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।’

সমন্বিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে যেসব কারখানার কর্মপরিবেশের মান সন্তোষজনক হবে, তাদের আলাদা সনদ দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মাহফুজুল হক ‘পরিদর্শন’ শব্দের পরিবর্তে ‘জরিপ’ অথবা ‘পর্যবেক্ষণ’ ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে অংশ নিয়ে বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এই পরিদর্শন কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। কোনোভাবেই কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার রহমান বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে কোনও ব্যবসায়ীকে ধরা হবে না; বরং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে উদ্যোক্তা, অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারি পর্যায়ে খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’

অনুষ্ঠানে কলকারখানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি, খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার তালিকা ও চেকলিস্টের ওপর তিনটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপিত হয়।

এফবিসিসিআই সেফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহর উপস্থাপিত কলকারখানা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপট ও পদ্ধতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি, বিডার নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও তিনটি উপ-কমিটি সম্পর্কে জানানো হয়। বলা হয়, ৬৮ ধরনের শিল্প খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি বিবেচনায় ৩২টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত পরিদর্শন কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে মোট ৪৬ হাজার ১০০টি কারখানাকে। তবে প্রথম তিন মাসে ৫ হাজার কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যবেক্ষণে যাওয়ার তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানো হবে।

দ্বিতীয় পর্বের উপস্থাপনায় অগ্রাধিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত শিল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলি আহমেদ খান।

তৃতীয় পর্বে, পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে কোনও বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে, তার চেকলিস্ট সম্পর্কে অবহিত করেন আইওটা কনসাল্টিং বিডি’র ফাউন্ডার ও সিইও এবং সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়া।

 

/জিএম/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট