পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ডাকা প্রতীকী গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করেছেন সাবেক মন্ত্রী ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারীদের ‘গণঅনশন’ ভাঙান। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর দু’টার দিকে তিনি মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে এসে উপস্থিত হন। এরপর সংহতি প্রকাশ করে আড়াইটার দিকে বিনিয়োগকারীদের ডাকা ‘গণঅনশন’ভাঙান রাশেদ খান মেনন।
পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও চলমান দরপতনের প্রতিবাদে ১২ দফা দাবিতে সোমবার সকাল ১১টা থেকে প্রতীকী এ গণঅনশন শুরু করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গণঅনশন থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেন বিনিয়োগকারীরা। একইসঙ্গে সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মন্তব্যের সমালোচনা করেন তারা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর-উর-রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘অব্যাহত দরপতনে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিদিন আমরা পুঁজি হারাচ্ছি। বাজার বাঁচাতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে জায়গা করে নিয়েছে, সেখানে দেশের পুঁজিবাজারের আজ করুণ অবস্থা। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বাজারের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’
বিনিয়োগকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে মধ্যে রয়েছে—
১. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
২. যে সব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে এবং করবে,ওই সব কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে ন্যূনতম ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। জেড গ্রুপের এবং ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) মার্কেট বলতে কোনও মার্কেট থাকতে পারবে না।
৩. দুর্বল কোম্পানির আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
৪. খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. টু সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যে সব কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যক্তিগত ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সেসব উদ্যোক্তা পরিচালকদের ও কোম্পানিগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৬. পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বাড়ানোর জন্য সহজ শর্তে ৩ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে, যা আইসিবি, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে ৫ শতাংশ হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোন হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পারবে।
৭. পুঁজিবাজারের প্রাণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে বাধ্য করা এবং প্রত্যেক ফান্ডের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে এবং মেয়াদ না বাড়িয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে উন্মুক্ত ফান্ডে রূপান্তর করতে হবে।
৮. পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৯. ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট-২০১৫ বাস্তবায়ন ও বাইব্যাক আইন চালু করতে হবে।
১০. আইপিও’র শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ৮০ শতাংশ কোটা দিতে হবে।
১১. ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোনের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।
১২. ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করতে হবে। এর ফলে কারসাজি বন্ধ করা যাবে।