X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সপ্তাহ পর ফের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় শেয়ারবাজার

গোলাম মওলা
০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪১আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৪৩

ডিএসই

দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সুশাসন আনার পাশাপাশি বাজারকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বিএসইসিকে। বিএসইসির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,  শেয়ারবাজারের যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন, সেসব কোম্পানিতে সর্বনিম্ন দুজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর নিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া  আগের স্বতন্ত্র পরিচালকদের পাশাপাশি এসব কোম্পানিতে নতুন করে আরও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে বিএসইসির নেওয়া পদক্ষেপের সুফলও পাচ্ছেন বাজারের বিনিয়োগকারীরা। এদিকে টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার।

বাজার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘একদিকে সুশাসনের চেষ্টা, অন্যদিকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আইপিও আসা। এই দুটি বিষয়ই বিনিয়োগকারীদেরকে বাজারের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘যে ধারায় বাজার এগিয়ে চলছে, তাতে এই বাজার একদিন অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।’

বাজারের চিত্র বলছে, গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে বেড়েছে সবকটি মূল্য সূচক। বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরায় গত সপ্তাহে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর আগে গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে যায় ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে কমে যায় ৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে টানা দুই সপ্তাহে ৭ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা কমার পর ডিএসই’র বাজার মূলধন ৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বাড়লো।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১০৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট ,বা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগে টানা তিন সপ্তাহের পতনে সূচকটি কমে ৭৩ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহের পতনের পর ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। এর আগে টানা তিন সপ্তাহের পতনে সূচকটি কমেছিল ৩৬ পয়েন্ট। এদিকে ইসলামি শরিয়াহ’র ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমে যায় ১০ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট।

সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানে সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে, বেড়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের।  দাম কমেছে ৮৮টির। ৬৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৭৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬২৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ১৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় কোম্পানিভেদে সর্বনিম্ন দুজন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর বাইরে ২ শতাংশ শেয়ারধারী কোনও বিনিয়োগকারী যদি এসব কোম্পানির পরিচালক হতে আগ্রহী হন, তাহলে সেই বিধানও রেখেছে বিএসইসি।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবেন, সেসব কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। গত সোমবার (৩০ নভেম্বর) ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মোট ২১টি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। আর ৭টি কোম্পানি বাড়তি সময় চেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালেই কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে সব সময়  কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও সেটি পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে আইনটি করার পর তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানিও ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত মানেনি।

অবশ্য বিএসইসিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পর বেশকিছু উদ্যোগ দেখে সবাই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। এর আগে  বিএসইসি পুনর্গঠনের পর গত ২৯ জুলাই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ ৪৩ কোম্পানিকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় বিএসইসি। এরপর এক দফা সময় বাড়িয়ে তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৫টি কোম্পানি নতুন করে শেয়ার কিনে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করেছে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে হত্যা, ভাতিজার যাবজ্জীবন
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেফতার
চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়