X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী লকডাউনেও কারখানা খোলা থাকবে, আশা গার্মেন্ট মালিকদের

গোলাম মওলা
১৮ জুলাই ২০২১, ১৮:৩৫আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৮:৪২

ঈদের পর তৈরি পোশাক কারখানা খোলা থাকবে এমনটিই আশা করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, আগামীকাল (সোমবার) অথবা ঈদের আগের দিন তারা গার্মেন্টস কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত পাবেন।

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানসহ সংগঠনটির সাবেক সভাপতিরাও আশাবাদী, আগামী ২৩ জুলাই থেকে দেশ কঠোর লকডাউনে গেলেও গার্মেন্ট কারখানা এর আওতার বাইরে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখার পাশাপাশি গার্মেন্টস শ্রমিকদের করোনা থেকে দূরে রাখতে আশা করছি, কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আসবে। এই সিদ্ধান্ত আগামীকাল অথবা ঈদের আগে যেকোনও সময় আসতে পারে।’ তিনি আশাবাদী, শুধু ব্যবসা নয়, সর্বোপরি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গার্মেন্ট কারখানা খোলা রাখা হবে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মতো কারখানা খোলা রাখা হবে বলে আশা করেন আরেক সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনিও মনে করেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ও অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে সরকার গার্মেন্টস কারখানা লকডাউনের আওতার বাইরে রাখবে।

বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আগামী লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে—এমন  তথ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের কারণে ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা আবারও রফতানি আদেশ কমিয়ে দিতে শুরু করেছেন। বিষয়টি নিশ্চয়ই সরকার সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে গার্মেন্টস খোলা রাখার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ তার আশা, ঈদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করা হবে এবং লকডাউনের সময় আগের মতোই বস্ত্র ও পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা সরকারের ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।

অবশ্য  শনিবার (১৭ জুলাই) ‘লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে গার্মেন্ট মালিকরা কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে আগের মতো জোরালোভাবে কিছু বলতে পারছেন না।

বাংলা ট্রিবিউনকে বেশ কয়েকজন গার্মেন্ট কারখানার মালিক বলেছেন, আমরা নিশ্চিত, সরকার পোশাক ও বস্ত্র খাতের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। এর আগে সরকার তাদের চাওয়া পাওয়ার গুরুত্ব দিয়েছে। যে কারণে এই খাত  বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গার্মেন্টস খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ঈদের পর যদি কারখানা খোলা রাখা না হয়, তাহলে আবারও বড় ধরনের সংকটে পড়বে রফতানি খাত।

শনিবার চুয়াডাঙ্গায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ‘লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ থাকবে’ এমন মন্তব্যকে ব্যক্তিগত অভিমত বলে মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে এখনও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তারা।  উদ্যোক্তাদের আশা, আজ  রবিবার সরকারি ছুটি শেষে অথবা আগামীকাল ইতিবাচক বার্তা আসবে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রফতানিতে এ খাত ভালো করেছে। ভারত, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারের পোশাক ক্রেতাদের কিছু অংশ বাংলাদেশে আসছেন এবং নতুন অর্ডার দিচ্ছেন। এ সময় কারখানা দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকলে শীত মৌসুমের কার্যাদেশ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ডিসকাউন্টে (ছাড়ে) বা উড়োজাহাজে তাদের পণ্য পাঠানো লাগতে  পারে। এ জন্য তাদের বড় ধরনের সংকটে পড়তে হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এর আগে সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকালে পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় কারখানা খোলা রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দেয় প্রতিনিধি দল।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সিদ্দিকুর রহমান, নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, তারা আশাবাদী, সরকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কঠোর লকডাউনকালে আগের মতোই বস্ত্র ও পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, শিল্প-কারখানা খোলা রাখা না হলে অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বৈঠক শেষে বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে কারখানা খোলা রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি আমরা। সচিব আমাদের আশ্বস্ত করছেন, তিনি আমাদের চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন।’

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রফতানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা উৎপাদন চালু রাখার সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধে পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু থাকে।

তবে  সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঈদ-পরবর্তী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ চলবে। এই কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর দুশ্চিন্তায় পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকেরা।

এদিকে ঈদের পর দুই সপ্তাহের লকডাউনে পোশাক ও বস্ত্র কারখানা চালু রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে যৌথভাবে চিঠি দিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) চেয়ারম্যান এম শাহদাৎ হোসেন ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আবদুল কাদের খান।

ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ‘পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করেন। দিনের অধিকাংশ সময় (মধ্যাহ্ন বিরতিসহ ১১ ঘণ্টা) কর্মক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে থাকেন তারা। গত রোজার ঈদে কাজের চাপ কম থাকায় ছুটিও কিছুটা শিথিল ছিল। কিন্তু এখন কাজের প্রচুর চাপ থাকায় ঈদে লম্বা ছুটির সুযোগ নেই। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ১৪ দিন, ঈদের ছুটি ৩ দিন ও ফিরে আসতে ২ থেকে ৩ দিন, অর্থাৎ মোট ১৯-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ধরে রাখা যাবে না। তারা ছুটে যাবেন উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেগুলো এখন করোনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।’ চিঠিতে বলা হয়েছে,  ‘বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ওই সব অঞ্চল থেকে কর্মস্থলে ফিরে এলে কোভিড সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া ২০ দিন বন্ধের পর কারখানা খুললে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করার প্রসঙ্গ আসবে। তখন বেতন পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে ঈদের পর দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়া হলে রফতানিমুখী শিল্প বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে রক্ষা পাবে।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘করোনায় গত ১৫ মাসে বিদেশি ক্রেতারা অনৈতিকভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্য দিয়েছেন। তারপরও বাজার ধরে রাখা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে রাখার স্বার্থে লোকসান দিয়েও কারখানা চালানো হয়েছে। এ সময়ে অনেকেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ সব দেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের হাতে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ আছে। এমন সময়ে ঈদের ছুটিসহ ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম, বড়দিন ও শীতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হয়ে যাবে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে ২ পোশাক কারখানা
বিজিএমইএর নতুন সভাপতি এস এম মান্নান
বিজিএমইএ নির্বাচন: ভোটগ্রহণ শেষে ফলের অপেক্ষা
সর্বশেষ খবর
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গৃহীত
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
রোমাকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
ইউরোপা লিগরোমাকে হারিয়ে ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শুরু হচ্ছে উন্মুক্ত কারাগার তৈরির কাজ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী