X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাটের বীজে ঘটে গেলো যত বিপ্লব

শফিকুল ইসলাম
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:১৫

একসময় রফতানিতে সেরা থাকলেও নতুন করে পাটখাতকে দেশের মূল অর্থনীতিতে যুক্ত করতে চায় সরকার। এজন্য পাটের নতুন ও উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটও (বিজেআরআই)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৫০টি পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এখন পাটের ২২টি উন্নত জাত চাষাবাদের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- ৯টি দেশি, ৮টি তোষা পাট, ৩টি কেনাফ ও ২টি মেস্তা জাত। সুপারিশকৃত এই ২২টি উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে বর্তমান সরকারের সময়কালেই উদ্ভাবিত হয়েছে ১১টি জাত। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেলো এ তথ্য।

বিজেআরআই জানিয়েছে, দেশে পাট বীজের অভাব দূর করতে ‘নাবী পাট বীজ উৎপাদন’ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বিজেআরআই। সাধারণত বীজ উৎপাদনে ৮-৯ মাস লাগে। নাবী পদ্ধতিতে মাত্র ৪-৫ মাসে দ্বিগুণের বেশি ফলন হয়। হেক্টরপ্রতি প্রায় ৫০০-৬০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। এতে বীজের ঘাটতি মেটানো সম্ভব। আবার বীজের জন্য পরনির্ভরতা কমাতেও ‘নিজের বীজ নিজে করি’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পাটের আঁশ ধুচ্ছেন এক কৃষক (ফাইল ছবি)

পাট গবেষণায় অগ্রগতি

•  পাট ও পাট জাতীয় ফসলের সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই-পোকামাকড় দমন এবং পাট পচন প্রক্রিয়ার ওপর ৭৫টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজেআরআই।

•  পাট ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে পাটের জার্মপ্লাজম ক্যারেক্টারাইজেশন, জাত উন্নয়ন, বালাই ব্যবস্থাপনা, কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা, সার ব্যবস্থাপনা, পাটভিত্তিক শস্য পর্যায় উদ্ভাবন, উন্নত পচন পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে ১১১টি গবেষণা হয়েছে।

•  তোষা পাটের একটি ‘অগ্রবর্তী লাইন’ জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বিজেআরআই তোষা পাট-৮ নামে ছাড়া হয়েছে। পাট, কেনাফ ও মেস্তার ৯০টি জার্মপ্লাজমের চারিত্রিক গুণাগুণ মূল্যায়ন করা হয়েছে। জার্মপ্লাজমগুলো উন্নত জাত উদ্ভাবনে ব্যবহার করা যাবে।

•  জিন ব্যাংকে সংরক্ষিত জার্মপ্লাজমগুলো থেকে গতবছর ৫০০টি জার্মপ্লাজমের বীজবর্ধন করে জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে পাটের ২২টি জার্মপ্লাজমের মলিকুলার বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হয়েছে।

•  দেশি, তোষা ও কেনাফের বিভিন্ন জাতের মোট ১৭০০ কেজি প্রজনন বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। চাহিদানুযায়ী বিএডিসি ও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫৭ কেজি সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রজনন বীজ উৎপাদনে ৭৪ কেজি নিউক্লিয়াস বীজ উৎপাদন করা হয়েছে।

•  চূড়ান্ত মাঠ পরীক্ষায় দেখা গেছে ১১টি নতুন ছত্রাকনাশক কার্যকর। সেগুলো কৃষকদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

•  বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাট পচনের জন্য অণুজীব সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর পচন-ক্ষমতা বের করার কাজ চলছে।

•  পানিস্বল্পতা আছে এমন এলাকায় পাটের রিবনিং করতে ‘অটো-জুট পাওয়ার রিবনার’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও শেষ হয়েছে।

•  অল্প সময়ে পাট কাটার জন্য ‘বিজেআরআই মাল্টিফাংশন জুট হার্ভেস্টার’ উদ্ভাবন করেছে।

পাট শুকানোর দৃশ্য (ফাইল ছবি)

•  বিজেআরআই’র উদ্ভাবিত পাট ও সমজাতীয় আঁশ ফসলের নতুন জাতসগুলোকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিজেআরআই’র আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ১ হাজার ১৯৫টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

•  কারিগরি গবেষণা উইংয়ের বিদ্যমান বিভাগগুলোর মাধ্যমে নতুন পাট পণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়নের বিষয়ে গত এক বছরে ৪৪টি গবেষণা কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়।

পাট মন্ত্রণালয় জানালো

•  নদীর বাঁধ নির্মাণ, রাস্তার ওপরের মাটির ক্ষয়রোধ, পাহাড়ের ঢাল রক্ষার জন্য উদ্ভাবিত ‘ন্যাচারাল এডিটিভ ট্রিটেড জুট জিও-টেক্সটাইল’ প্রযুক্তিটি একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিজেএমসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বছরে দেশের প্রায় দুইশ কোটি টাকার সিনথেটিক জিও টেক্সটাইল আমদানি সাশ্রয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

•  অপ্রচলিত দ্রব্য যেমন লিচু পাতা থেকে সহজলভ্য পরিবেশবান্ধব ৪টি প্রাকৃতিক রঙ আবিষ্কার করা হয়েছে। যা দিয়ে পাটবস্ত্র ও সুতায় রঙ করা যায়। এ প্রযুক্তিতে পাটজাত দ্রব্যকে ক্ষুদ্রশিল্প আকারে রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

•  ওয়ার্প-এ তুলা এবং ওয়েফ্ট-এ পাটের সুতা ব্যবহার করে জুট-কটন ইউনিয়ন ফেব্রিক বানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ থেকে শুরু করে জায়নামাজও তৈরি হচ্ছে।

•  পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুট-টেক্সটাইল উইং-এ বিদ্যমান বিভাগের মাধ্যমে নতুন পাটজাত পণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট, তুলা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক তন্তুর সংমিশ্রণে পণ্যের উৎপাদন ও মানোন্নয়নের বিষয়ে আটটি গবেষণা কর্মসূচি হয়েছে।

•  পাট-তুলা মিশ্রিত সুতা দিয়ে পাঞ্জাবির কাপড় তৈরি করা হয়েছে। পাট, তুলা ও ভেড়ার পশম মিশিয়ে কম্বল তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই কম্বল শীত প্রধান এলাকার মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী হওয়ার কারণে পাটের ব্যবহারও বাড়বে।

পাট সংগ্রহ (ফাইল ছবি)

•  বিজেআরআই জানিয়ছে, জৈবপ্রযুক্তি তথা বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে বিশ্বে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে দেশি ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার করা হয়েছে।

•  জিনোম তথ্য ব্যবহার করে উচ্চফলনশীল, প্রতিকূলতা সহনশীল পাট উৎপাদনের জন্য বর্তমান সরকার ‘পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে পাটের বিভিন্ন সহনশীল (লবণাক্ততা, খরা, বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগজীবাণু সহনশীল ইত্যাদি) ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

•   বাংলাদেশের প্রায় ২৮ শতাংশ জমি লবণাক্ততার কারণে পতিত থাকে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের একটি ব্যাপক এলাকা খরাপ্রবণ। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ওই পতিত জমিতে পাটচাষ সম্প্রসারণ সম্ভব।

•  আগে পাটকাঠি ক্ষেত খামারে ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন তা হয় না। এগুলো দিয়ে তৈরি হয় উচ্চমূল্যের অ্যাকটিভেটেড চারকোল, যা বিদেশে রফতানি হয়।

এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রকার পাটের বীজ উদ্ভাবনের কারণে আমদানি নির্ভরতা কমেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পাট আবার মূল অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।

/এফএ/ইউএস/
টাইমলাইন: পাট সম্পদ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:০০
পাটের বীজে ঘটে গেলো যত বিপ্লব
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৩০
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে: স্পিকার
শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে: স্পিকার
নোয়াখালীতে গরমে অসুস্থ এক শিক্ষকসহ ১৫ শিক্ষার্থী
নোয়াখালীতে গরমে অসুস্থ এক শিক্ষকসহ ১৫ শিক্ষার্থী
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে