X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারের ভর্তুকি নিয়ে সংকটে সরকার

শফিকুল ইসলাম
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:২৮

মহামারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। গতবছরের তুলনায় যা প্রায় তিন গুণ। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে দুই গুণের মতো। এই দুই কারণে বাংলাদেশের সারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ‍ভর্তুকি দিয়েও সরবরাহ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ ঠিক রাখতে এ বছর সার ক্রয় খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়ার চাহিদা ২৬ লাখ টন, টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন এবং ডিএপি সারের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১৬ লাখ টন। তবে এখন দেশে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু প্রয়োজনীয় সার কেনার ক্ষেত্রে এত ভর্তুকি দিলে সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। অন্যদিকে ভর্তুকির অভাবে সারের দাম বাড়ালে কৃষকেরও কষ্ট বাড়বে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দাম আরও বাড়বে। যা সরকারের জন্য আরও বিব্রতকর। 

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে মোট ৮৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি ছিল মাত্র ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় এখন সারে ভর্তুকি বেড়েছে সাতাশ গুণ। যার ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ খাদ্য উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় এসে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেচকাজে ডিজেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকি চালু করে। এতে মাত্র পাঁচ বছরে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ পুনরায় খাদ্য ঘাটতি এবং উৎপাদনে নেতিবাচক ধারায় চলে আসে। পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার পুনরায় সার, সেচ, বীজ, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ভর্তুকি চালু করে। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণে কোনও সংকট না হওয়ায় কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট দানাদার শস্যের উৎপাদন হয়েছে ৪৫৫ দশমিক ৫ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ৩৭৬ কোটি ৮ লাখ টন, গম ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন, ভুট্টা ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার টন, আলু ১ কোটি ৬ লাখ ১৩ হাজার টন, ডাল জাতীয় ফসল ৯ লাখ ৩৯ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টন এবং পাট ৭৭ লাখ ২৫ হাজার বেল উৎপাদিত হয়েছে। এসব সাফল্যের পেছনে ছিল সারের দাম কমানো ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ৬ দিনের মধ্যে নন-ইউরিয়া সারের দাম চার দফা কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ১৬ টাকা এবং ইউরিয়া ২০ টাকা থেকে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সর্বশেষ ডিএপির দাম ২৫ টাকা হতে ১৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সারের দাম বেড়েছে। ৯৬ টাকায় ইউরিয়া কিনে কৃষককে দেওয়া হচ্ছে ১৬ টাকায়। প্রতি কেজিতে ইউরিয়ায় সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৮২ টাকা। টিএসপি সার ৭০ টাকায় কিনে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ২২ টাকায়। এমওপি সারও ৫৪ টাকায় কিনে কৃষককে দেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকায়। ডিএপি সার ৯৩ টাকায় কিনে কৃষকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ১৬ টাকায়। প্রতিকেজি ডিএপি সারে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৭৯ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই বিশাল অংকের ভর্তুকি দিতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লাগবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এবছর সরকার ভর্তুকিতে বরাদ্দ রেখেছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সারের সরবরাহ ঠিক রাখতে এ বছরই আরও প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বাড়তি লাগবে বলে মনে করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, কৃষির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার যেকোনও চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম। বিশ্বব্যাপী সারের দাম বেড়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার কাজ করবে।     

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, এত বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের অনেক দেশ খাদ্য সংকটে পড়লেও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সব দুর্যোগ মোকাবিলা করে খাদ্য উৎপাদনের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও রাখতে পারবো।

/এফএ/
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানতীব্র গরমে ঝরছে আমের গুটি, উৎপাদন নিয়ে চাষিদের শঙ্কা
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ