X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২
পাসপোর্ট ফি নিয়ে ভোগান্তি

‘সবাই বলে সোনালী ব্যাংকে যান’

গোলাম মওলা
২০ এপ্রিল ২০২২, ২২:০০আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৫৮

সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোনালী ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোতে দক্ষ জনবল নেই। গ্রাহকরা বলছেন, বেসরকারি চার-পাঁচটি ব্যাংক ঘুরে শেষে সোনালী ব্যাংকে গিয়েই জমা দিতে হচ্ছে টাকা।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) পাসপোর্টের ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া সাংবাদিক মাহমুদ মানজুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাসপোর্ট রিনিউ ফি জমা দেওয়ার জন্য এই গরমে-জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্রাঞ্চ টু ব্রাঞ্চ ঘুরেও ব্যর্থ হলাম। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল আরাফাহ ও প্রিমিয়ার ব্যাংক— কেউ ফি নিলো না এবং নিশ্চিত হলাম, ইচ্ছাকৃত এই ফি তারা নিচ্ছে না। সম্ভবত এতে তাদের লাভ নেই। বরং সময় নষ্ট। তাই যেখানেই যাই সবাই বলছেন—সোনালী ব্যাংকে যান।’

এ বিষয়ে মাহমুদ মানজুর বলেন, ‘আল আরাফা ইসলামি ব্যাংকের পান্থপথ শাখায় গেলে কর্তব্যরত অফিসার সোনালী ব্যাংকের দুটি ফরম এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা আপনি পূরণ করে রেখে যান। আমরা দেখি।’ বললাম, ‘ফরমটির কোথায় কোন তথ্য দেবো, সেটা তো আমি জানি না।’ কর্মকর্তা বললেন, ‘আমিও জানি না। আমরা আগে করিনি। এগুলো কীভাবে করতে হয় জানি না। আপনারটা আপনি করেন।’ তখন কাজটি না করেই চলে আসেন বলে জানান মাহমুদ মানজুর।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে এমন ভোগান্তির শিকার হওয়া সঞ্চিতা লিখেছেন, এমন ভোগান্তি আমাকেও পোহাতে হয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বললেন, সার্ভার নাকি কাজ করছে না। শেষ ভরসা হিসেবে সোনালী ব্যাংক নিলো যত্ন করেই। চারটা ব্যাংক ঘুরছিলাম।’

মিরপুর রোডে অবস্থিত ব্যাংক এশিয়ার শুক্রাবাদ শাখা থেকে ফেরত আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে তাকেও ফেরত আসতে হয়েছিল। ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছিলেন এখানে পাসপোর্টের ফি নেওয়া হয় না। তাকে সোনালী ব্যাংকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

তবে ব্যাংক এশিয়ার সব শাখা ও এজেন্ট আউটলেট পাসপোর্টের ফি জমা নেয় বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী।

তিনি বলেন, সব শাখা যেন পাসপোর্ট ফি জমা নেয় সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট আউটলেটগুলো থেকেও এই সেবা দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি হওয়ায় আমিই প্রথম পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে গ্রাহকদের এ সেবা দেওয়ার অনুমতি নিই। ২০১৪ সালে আমরা চার-পাঁচটি ব্যাংক এ সংক্রান্ত চুক্তি করি। তখন থেকে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছি। আজই প্রথম অভিযোগ পেলাম যে আমার ব্যাংক গ্রাহককে ফিরে যেতে বলেছে।’

যা বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে এই ফি কেবল সোনালী ব্যাংক নিতো। বাংলাদেশ ব্যাংকও নিতো। এরইমধ্যে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বললো তারাও নিতে চায়। সার্ভার খুলে দেওয়া হলো সবার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো জনগণ সোনালী ব্যাংকের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় অন্য ব্যাংকগুলোতে যায় না বললেই চলে। ব্যাংকগুলোও এ সেবা দেওয়ার নির্দিষ্ট জনবল রাখেনি। ফলে দু-একজন যারা যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তি হচ্ছে।’

তবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা নেই

সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার্ভার উন্মুক্ত থাকায় সব ব্যাংক এই সেবা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এই ফি যেহেতু সরকারের খাতে সরাসরি যায়, সেহেতু এটি সরকারের নির্দেশেই ব্যাংকগুলো নিতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু সরকারের নির্দেশ রয়েছে, সেহেতু ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এ সেবা দিতে বাধ্য।

সরকারের সিদ্ধান্ত

দুই বছর আগেও বিভিন্ন ট্রেজারি চালান ও সরকারি চালান বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যেতো। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে।

এ কারণে ২০২০ সালে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ট্রেজারি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার।

প্রথমে ট্রেজারি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি এবং ফি প্রদান সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক চুক্তি হয়। এখন সব ব্যাংকের জন্যই তা উন্মুক্ত।

অন্যদিকে, এতদিন পাসপোর্টের ফি শুধু সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকে জমা দেওয়া যেতো। গত বছর সরকার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম চালু করে। এতে যেকোনও ব্যাংকের যেকোনও শাখায় ট্রেজারি চালান, সরকারি চালান, ব্যাংক ড্রাফট ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ফি বেসরকারি ব্যাংকে জমা নেওয়া শুরু হয় ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই সময় ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অতিরিক্ত ঘাম কমাতে এই ১১ টিপস মেনে চলুন
অতিরিক্ত ঘাম কমাতে এই ১১ টিপস মেনে চলুন
এক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টাএক মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস
একাত্তরে গণহত্যায় সহযোগিতায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যার আহ্বান এনসিপি’র
একাত্তরে গণহত্যায় সহযোগিতায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যার আহ্বান এনসিপি’র
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?