X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পেঁয়াজ নিয়ে কী ভাবছে সরকার

শফিকুল ইসলাম
২২ মে ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১০:০০

বাজার তদারকি না থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। রোজার ঈদের আগেও ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বর্তমানে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশে প্রচুর উৎপাদন হয়েছে। তাই পেঁয়াজের দাম এত বাড়ার কোনও কারণ নেই। বাজার মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ আমদানির কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পেঁয়াজ পচনশীল ফসল হওয়ায় এটি বেশি দিন রাখা যায় না। হয় শুকিয়ে যায়, নয়তো পচে যায়। তবে কিছু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। গুদামে কীভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পেঁয়াজের যদি সেলফ লাইফ বাড়ানো যেতো, তাহলে দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে, তা  দিয়েই বাজারের চাহিদা মেটানো যেতো। ইতোমধ্যে দেশে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য-৫ শাখার যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতারের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৭ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছে।  

চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য, টিসিবির তথ্যানুযায়ী, প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম একমাস আগে ৩০ টাকা ছিল, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।’

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে প্রতি কেজির দাম ৮০ টাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কৃষকের কাছে, গুদামে ও আড়তদারের কাছে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা দেখতে গত ২-৩ দিন ধরে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিয়েছে। মাঠ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে যে দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তবে, দাম আরও বাড়বে—এই আশায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি করছে না। এছাড়া, সবেমাত্র পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কথা না। অতিরিক্ত দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের হাত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছে। এতে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দেয়, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যম আয়ের ও  সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত কৃষকের স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি। কারণ, গত বছর কৃষকরা দাম কম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে প্রায় ২ লাখ টনের মতো। আমরা উচ্চপর্যায়ে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করছি। গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কিনা, তা ২-৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য মূলত পেঁয়াজের ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তারা বাজারে গিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।’ আমদানির পর পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের দিয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।’

এদিকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দেশের কৃষকরা যাতে উপযুক্ত দাম পান, সে জন্য দুই মাস ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এর সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। পাবনা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আনা হয়। প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে কিনতে হয় আড়তদারদের। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলে পেঁয়াজের প্রতি কেজিতে আরও চার-পাঁচ টাকা যোগ হয়। ফলে এখানে ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজার অস্থির। প্রতিদিন দাম বাড়ছে। আমরা যেখান থেকে পেঁয়াজ কিনি, সেখানেই দাম বেশি। ব্যবসায়ীদের কাছে নয়, কৃষকদের কাছেই আছে পেঁয়াজ। অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা মজুত করার সাহস পাচ্ছেন না। কৃষকরা বেশি দামে বিক্রি করছেন। অথচ কৃষকরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেছেন—দাম ৫০ টাকার মধ্যে রাখবেন। কিন্তু সে কথা তারা রাখেননি।’

এ প্রসঙ্গে পাবনার পেঁয়াজের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করে বিক্রি করছি। বেশিরভাগ কৃষক আগেই পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আমাদের কাছে মজুত নেই। কাজেই বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে আমাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’

উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে ক্ষতি হয় ২৫ শতাংশ। শুধু রমজান মাসেই দেশে পেঁয়াজের চাহিদা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানি করা হয় ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া আমদানিকৃত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতির পরিমাণ ৮ থেকে ১০ শতাংশ।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে: প্রতিমন্ত্রী
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার তাগিদ
সর্বশেষ খবর
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য মরিয়া ইউক্রেনীয় সেনারা
তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য মরিয়া ইউক্রেনীয় সেনারা
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে