সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়ার পথে হাঁটে, তবে তা একদিকে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, অপরদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াবে— এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান।
সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট অন্তর্দৃষ্টি: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিগন্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে এমসিসিআই এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট এমন একটি সময়ে পাস হয়েছে, যখন বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, ঋণের উচ্চ সুদের হার এবং ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এসব প্রেক্ষাপটে বাজেটকে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথনির্দেশক হিসেবে দেখতে চাই।
তিনি বলেন, বাজেটে এমসিসিআইয়ের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আশাবাদী। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের ফলে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, ভারসাম্য এবং কার্যকারিতা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাজেটে গৃহীত এমসিসিআই’র প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. পারকুইজিট সীমা বৃদ্ধি: আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৫৫(ঘ) অনুযায়ী কর্মীদের জন্য করযোগ্য পারকুইজিট সীমা ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ কর্মী ধরে রাখতে সুবিধা পাবে।
২. উৎসে কর (টিডিএস) রিটার্ন দাখিলে সময়সীমা সহজ করা: মাসিকের পরিবর্তে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবসার প্রশাসনিক বোঝা কমাবে।
৩. উৎসে কর্তনকৃত ভ্যাট সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো: ভ্যাট আইন ২০১২-এর ধারা ৫০(২) অনুযায়ী এ সময়সীমা তিন থেকে বাড়িয়ে ছয়টি কর সময়ে উন্নীত করা হয়েছে, যা অগ্রিম কর ও ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে এমসিসিআই সভাপতি বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্স ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি ক্ষুদ্র এবং কম মুনাফার ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। একইসঙ্গে আনুষ্ঠানিক খাতে প্রবেশের আগ্রহ কমাবে।
তিনি সরকারকে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রবৃদ্ধি-সহায়ক ও ন্যায্য কর কাঠামো গঠনের দাবি জানান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র গবেষণা পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা সরকারের উন্নয়ন ব্যয়কে রক্ষণশীল করে তুলেছে। একইসঙ্গে জিডিপির তুলনায় এডিপি বরাদ্দ হ্রাস রাজস্ব প্রবণতার এক সতর্ক চিত্র তুলে ধরে। তবে তিনি সতর্ক করেন, এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে আরও অংশ নেন— পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, এমসিসিআইয়ের ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন কমিটির সদস্য এফসিএ আদীব এইচ. খান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন. করিম এবং ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান এফসিএ হাসান মাহমুদসহ ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিরা।