X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
রমজানকে কেন্দ্র করে অস্থির বাজার

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রবিবার জরুরি বৈঠক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে

শফিকুল ইসলাম
২১ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:১৬আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:৩১

রমজানকে কেন্দ্র করে অস্থির বাজার রোজা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অস্থির হয়ে উঠছে নিত্যপণ্যের বাজার। কোনও কারণ ছাড়াই প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে। রোজার আগেই নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে হংকংয়ে অবস্থানত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পেয়েছেন তিনি। নির্দেশনা অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে রবিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৯ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত সভার নোটিশ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সভায় উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।  
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী  সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। ১৯ এপ্রিল ইস্যুকৃত চিঠিতে লেখা রয়েছে ‘অতীব জরুরি’। রবিবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিতব্য সভায় অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই কৃষিসচিব, খাদ্যসচিব, শিল্পসচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের ফোকাল পয়েন্ট ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক, আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রকের দফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিকের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো করে বাড়াচ্ছে সয়াবিন তেলের দাম। যৌক্তিক কোনও কারণ ছাড়াই ইতোমধ্যে বেড়েছে চিনি ও মসুর ডালের দাম। বাজারে উঠেছে নতুন চাল। তারপরও দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। উল্টো বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ভরা মৌসুমেও সহনীয় পর্যায়ে আসছে না রসুন ও পেঁয়াজের দাম। প্রচণ্ড খরায় পুড়ে যাওয়ার অজুহাতে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। নদীনালা শুকিয়ে গেছে- এমন অজুহাতে বেড়েছে মাছের দাম। সবজি ও মাছের সরবরাহ কম দেখিয়ে বেড়েছে  মুরগির ডিম ও মাংসের দাম। আর সব কিছুর বাজারই যখন চড়া, তার ওপর সীমান্ত দিয়ে আসছে না ভারতীয় গরু। এমন অজুহাতে বেড়েছে গরুর মাসেংর দামও।

আরও পড়ুন:   নওগাঁ  নওগাঁয় দেশের সবচেয়ের বড় চুনা পাথরের খনির সন্ধান

আশঙ্কা করা হচ্ছে, শবেবরাত ও রমজান যত ঘনিয়ে আসবে, এ সব নিত্যপণ্যের দামও তত বাড়বে। রমজানে চাহিদা বৃদ্ধি পায় বলে দামও বৃদ্ধি পায় পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, ডাল, তেলসহ সব কিছুর। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় কাঁচামরিচ, শসা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, লেবুর দাম। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাবছর বাজার মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত সরকারি মনিটরিং কমিটিতে উপসচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিটি কমিটির বাজারে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করার কথা। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা সিটি করোপরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি রয়েছেন। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সারাবছরের জন্য গঠিত এই ১৪টি মনিটরিং টিম গঠিত হলেও টিমগুলো মূলত কাজ করে রোজার সময়। অন্য সময় বাজার অস্থিতিশীল না হলে খুব একটা বাজার মনিটরিংয়ে যান না কমিটির সদস্যরা। এ কারণেও বাজার অস্থির হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন:   ফেসবুকে-ফের-প্রশ্ন-ফাঁস-হলো ফের প্রশ্ন ফাঁসে আহমেদ নিলয়: ঠেকাতে ব্যর্থ সরকার!

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শবেবরাত ও রোজা আসার আগেই অস্থির হয়ে উঠছে চিনি ও পেঁয়াজের বাজার।  হঠাৎ করেই ৪২ টাকা কেজি দরের চিনি খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর কোনও কোনও মহল্লায় তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ কম। অন্যদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোয় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সরবরাহ কমের অজুহাত দিয়ে চিনির দাম বেড়েছে। একইভাবে আমদানিকারকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় চিনি উৎপাদনকারী সংস্থা চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনও (বিএসএফআইসি) তাদের উৎপাদিত চিনির দাম বাড়িয়েছে। জানা গেছে, লোকসান এড়াতে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন প্রতিটন চিনির দাম ৪৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪৮ হাজার টাকা করেছে। এ কারণেও বেড়েছে বেসরকারি কোম্পানির চিনির দাম।

এদিকে বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে গেছে। মোকাম থেকে পেঁয়াজ আসছে না।  এমন অজুহাতে আগেই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রকারভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ এখনও বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। সরকারি সংস্থা টিসিবির দেওয়া বাজার প্রতিবেদনে পেঁয়াজ এখনও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে গত দুদিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে বেড়েছে মসুর ডাল, মুগড়াল, ছোলা, লবনের দাম।  

আরও পড়ুন: সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সরকারবিরোধী একটি মহল  সাইবার ক্রাইম আতঙ্কে ক্ষমতাসীনরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। আর ফরিদপুরের কৃষকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০ টাকা কেজি দরে। কোনও অজুহাতেই ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে পারে না বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী। এটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন সরকারের এই অতিরিক্ত সচিব। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, উৎপাদিত পেঁয়াজের সঠিক দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশায় ভুগছেন। তারা আগামী বছর পেঁয়াজ উৎপাদন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজারের এই অস্থিরতার বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

কাওরান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম লালু জানান, বর্তমানে ৫০ কেজি চিনির বস্তার দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাতে প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ে ৪৯ টাকা। যা এক মাস আগে এই ৫০ কেজির চিনির বস্তা বিক্রি হয়েছে, ১ হাজার ৮৫০ টাকা দরে। তার মতে, চিনির কেজি এখন ৪৯  টাকা দরে বিক্রি হলেও গত মাসের শুরুর দিকে তা ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ছোলা, মসুর ডাল ও মুগডালের অবস্থাও একই রকম।

/এমএনএইচ/আপ- এপিএইচ /

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা