X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

দেশে জঙ্গি অর্থায়নে মার্কিন নাগরিক!

নুরুজ্জামান লাবু
০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৪৬

শিব্বির আহমাদ (মাঝে)

বাংলাদেশে জঙ্গিদের অর্থায়নে মার্কিন এক নাগরিকের সন্ধান পেয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। শিব্বির আহমাদ নামে নব্য জেএমবি’র শীর্ষ এক নেতার ব্যাংক হিসাবের লেনদেন যাচাই করে এ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শিব্বিরকে মার্কিন ওই নাগরিক একাধিকবার কয়েক হাজার ডলার পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়নকারী ওই ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধার করেছে সিটিটিসি। জঙ্গি কাজে অর্থায়নকারী ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই’র  সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সিটিটিসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে মার্কিন ওই নাগরিকের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিব্বিরের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের আইএসের অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিব্বিরের মাধ্যমে নব্য জেএমবিকে অর্থায়ন করেছে। আমরা জঙ্গিদের অর্থায়নকারী একজনকে শনাক্ত করেছি। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া শিব্বির আরও যাদের সঙ্গে লেনদেন করেছে, তাদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

সিটিটিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ থানার পূর্ব বাসাবো এলাকা থেকে শিব্বির আহমাদকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন, পাঁচটি উগ্রবাদী বই ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার একটি রশিদ উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে সবুজবাগ থানায় একটি মামলা করার পর একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে শিব্বির জানিয়েছে, নব্য জেএমবি’র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সে সংগঠনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করতো। নব্য জেএমবি’র এক সময়ের আমির আবু মুসার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ২০১৭ সালের মার্চে মৌলভীবাজারে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মুসা নিহত হলে কিছু দিন সে নিষ্ক্রিয় ছিল। ২০১৮ সালে পুনরায় নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করতে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশের আইএস অনুসারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে  অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। ওই অর্থ সে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ও নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করেছে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, শিব্বিরের সঙ্গে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, আফগানিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছেন তারা। সিক্রেট টেলিগ্রাম চ্যানেলের গ্রুপ চ্যাটে প্রত্যেকেই কুনিয়া বা উপনাম ব্যবহার করতো। এ কারণে শিব্বির যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। পরে শিব্বিরের একটি ব্যাংক হিসাব ও বিদেশ থেকে অর্থ আনার তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের সূত্র ধরে অর্থদাতাকে শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শিব্বিরের লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। শিব্বিরকে মার্কিন এক নাগরিক নিয়মিত অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ পাঠাতে হলে নাম-ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিতে হয়। সেই তথ্যের সূত্র ধরে মার্কিন ওই নাগরিককে শনাক্ত করা হয়।

সিটিটিসির কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবিকে অর্থায়নকারীদের শনাক্ত করতে তারা মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন। সম্প্রতি এফবিআইয়ের একটি দল ঢাকায় আসার পর বিষয়টি নিয়ে সিটিটিসির সঙ্গে বৈঠক করেছে। মার্কিন ওই নাগরিককে দ্রুত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এফবিআইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সিরিয়াফেরত ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করেছিল শিব্বির

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর বাসাবো এলাকার সাইদিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৭ সালে দাখিল পাস করা শিব্বির ইংরেজি ভাষায় খুবই দক্ষ। পেশায় মসজিদের মুয়াজ্জিন ও সহকারী ইমাম হিসেবে কাজ করা এই তরুণ ২০১৫ সাল থেকে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ার কারণে জঙ্গিদের নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল বেশি। টেলিগ্রাম চ্যানেলে আলাপচারিতার সূত্র ধরেই গারিবা নামে ফরাসি এক তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গারিবা আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়া গিয়েছিল। পরে সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে সে নিজ দেশে ফিরে যায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিচয় ও একই আদর্শিক হওয়ার সূত্র ধরে গারিবা ও শিব্বির অনলাইনের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। গারিবাকে নিয়ে শিব্বির আফগানিস্তানের খোরাসানে বা ইরাক-সিরিয়ায় গিয়ে আইএসের হয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সিটিটিসির সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে।

সিটিটিসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, শিব্বিরের ব্যাংক হিসাব থেকে গারিবাকে কিছু অর্থ দেওয়ার তথ্যও পেয়েছেন তারা। গারিবা ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের যেসব নাগরিকের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে সাংগঠনিকভাবে কীভাবে এসব অর্থ খরচ করা হয়েছে, তাও জানার চেষ্টা চলছে।

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি