X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

এমন ‘স্বাভাবিক’ মানেই সামনে বিপদ!

শফিকুল ইসলাম
০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:০০আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৪০

লোকারণ্য নিউ মার্কেট এলাকা, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই কোভিড ১৯-এর মধ্যে জনজীবনে ছন্দ ফেরাতে শর্তসাপেক্ষে অনেক কিছু চালুর অনুমতি দিয়েছিল সরকার। আশপাশে তাকালে মনে হবে নিঃশর্তেই স্বাভাবিক হয়ে আছে যাবতীয় চলাফেরা। তবে এ অবস্থাকে ‘স্বাভাবিক’ বলতে রাজি নন সচেতন নাগরিকরা। তাদের মতে, করোনার মধ্যে এত ‘স্বাভাবিক’ চিত্র মানেই সামনে বড় বিপদ আসন্ন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে বাকি সব শর্ত শিথিল করে শুধু মাস্ক ব্যবহারের কথা বলেছে সরকার। মানুষ তাতেও উদাসীন। মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে কিছু এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও অফিস আদালতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ শর্ত জুড়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের খামখেয়ালি দেখলে মনে হবে বিশ্বকে স্থবির করে দেওয়া করোনা মহামারি বাংলাদেশকে স্পর্শই করেনি। অথচ প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন অনেকে।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে করোনা বিষয়ক নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অফিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও ৩৮ জন মারা গেছে। এ নিয়ে মারা গেলো ৬ হাজার ৭১৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, শনাক্ত বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০ জনে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এবং এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার নমুনা পরীক্ষার ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। একই সময়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৮৮৪টি। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৯৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪২৩ জন।
জানা গেছে, কোভিউ ১৯-এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার দেশের সাধারণ মানুষের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩০ জুনের পর থেকে না বাড়িয়ে কয়েকটি শর্তে স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১ জুলাই থেকে সরকারি অফিস আদালত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, বাজার, শপিং মল, দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে এবং মহল্লার দোকানপাট রাত ১০টার মধ্যে বন্ধ করা। মাস্ক ছাড়া শপিং মলে প্রবেশ করতে না দেওয়া। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না আসা। জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। একইসঙ্গে সব ধরনের যানবাহনে দাঁড়ানো যাত্রী বহন না করা এবং চালক, হেলপারসহ যাত্রীদের অবশ্যই মাস্ক পরা ও হাত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ছিল ১২ দফা নির্দেশনা। অফিস চালুর আগে প্রতিটি কক্ষ, আঙিনা, রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা, প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা, অফিস পরিবহন জীবাণুমুক্ত করা, যানবাহনে বসার সময় ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা ও সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করা, দৃশ্যমান একাধিক স্থানে ছবিসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশনা ঝুলিয়ে রাখা এবং অসুস্থ কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করাও ছিল নির্দেশনায়। ভিজিলেন্স টিমের কাজ ছিল এসব নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা দেখা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীসহ দেশের কোথাও শপিং মল রাত ৮টায় বন্ধ হচ্ছে না। মহল্লার দোকানপাট খোলা থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের দৃশ্যও এখন বিরল। সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও পকেটে করে মাস্ক নিয়ে অফিসের গেটে গিয়ে তারপর তা মুখে লাগানো হচ্ছে। বের হওয়া মাত্রই তা খুলে আবার পকেটে রাখা হচ্ছে বা থুতুনিতে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। বাসেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যাত্রী। অধিকাংশ বাসচালক বা হেলপারের মুখে মাস্ক নাই। যাত্রীদেরও অধিকাংশ চলাফেরা করছেন মাস্কবিহীন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানিয়েছেন, এমন স্বাভাবিক চলাফেরা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এটা বরং বড় বিপদ ডেকে আনবে। সবার ভ্যাকসিন পেতে বহু সময় লাগবে। তখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কিছু মানুষের সচেতনতার অভাব ও উদাসীনতা সেই সম্ভাবনার আলো নিভিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জরিমানা বাড়ানো হবে। কারাদণ্ড দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

/এসআই/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৫)
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি