মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের মেয়াদ শেষে বুধবার হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে অভিষেক হতে যাচ্ছে জো বাইডেনের। তার সঙ্গে শপথ নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে বিদায়ী ভাষণে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা যা করতে এসেছিলাম, তার সবই করেছি। এর বাইরেও আরও অনেক কিছু করেছি।’
ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, তিনি অনেক 'কঠিন লড়াইয়ের মোকাবেলা করেছেন, সবচেয়ে শক্ত লড়াই...কারণ আপনারা আমাকে এজন্যই নির্বাচিত করেছিলেন।'
গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হলেও এখনও সেই ফলাফল পুরোপুরি মেনে নেননি ট্রাম্প। ইউটিউবে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায়ও ট্রাম্প উত্তরসূরির নাম নেননি তিনি।
'সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে' এরইমধ্যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন। প্রথমবার অভিশংসন থেকে সিনেটে তিনি অব্যাহতি পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার যদি তিনি সেনেটে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি আর কখনও কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
করোনাভাইরাসে চার লাখ আমেরিকানের মৃত্যু আর দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলেও সেসব ছাড়িয়ে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের ওই ভয়াবহ তাণ্ডব। তবে বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে 'বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে।' যখন তিনি প্রেসিডেন্টের দফতর ছাড়ছেন, তখন তার জনসমর্থনের হার ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদায়ী কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য জনসমর্থনের এ হার সর্বনিম্ন; যা একটি রেকর্ড।
এদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন মঙ্গলবার তাদের ডেলাওয়ারের বাসভবন ছেড়ে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ৩৬ বছর ধরে সিনেটর থাকার সময় এখানেই থাকতেন জো বাইডেন। এক আবেগঘন বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘যখন আমি মারা যাবো, ডেলাওয়ারের কথা আমার হৃদয়ে লেখা থাকবে।’
বুধবার তিনি হোয়াইট হাউজে যাবেন। বাংলাদেশ সময় রাতের বেলায় ক্যাপিটল ভবনের সামনের চত্বরে তার অভিষেক অনুষ্ঠান হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এর আগে আর কোনও অভিষেক অনুষ্ঠান এমনভাবে হয়নি। পার্লামেন্ট ভবন ইউএস ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর পুরো ওয়াশিংটন কড়া নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং হোয়াইট হাউজের চারদিকে ধাতব বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে, সেখানে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য গুটিকয়েক মানুষকে ক্যাপিটলের সামনের ন্যাশনাল মলে যেতে দেয়া হবে। এমনকি এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ১৮৬৯ সালে সর্বশেষ অ্যান্ড্রু জনসনের পর এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। বুধবারই ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে ফ্লোরিডায় তার অবকাশ যাপন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সূত্র: বিবিসি।