চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন জারির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২০ সালের ২৩শে জানুয়ারি শহরটিতে প্রথম লকডাউন জারি হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়েছিল তা। ৭৬ দিন পর তা প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দেশটির কর্তৃপক্ষ "রহস্যজনক অসুস্থতা" বলে এটি মোকাবিলায় শুরুতে একটু আস্তে ধীরেই পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে চীন যখনই বুঝতে পারলো এটা একটা সমস্যা, তখনই কর্তৃপক্ষ তা কঠোরভাবে দমনের উদ্যোগ নিয়েছিল। জানুয়ারির ২৩ তারিখ উহানে জারি করা হয় লকডাউন। চীনের নতুন বছর উৎযাপনের দুই দিন আগে উহানের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১১ মিলিয়ন লোককে কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। মুখের মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে তারা কয়েকদিনের মধ্যে বিশাল ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে ফেলে। উহান যে কৌশলে ভাইরাস মোকাবেলা করছিল সেভাবে চীনের অন্যান্য বড় শহর বেইজিং এবং সাংহাই তাৎক্ষণিক লকডাউন এবং ব্যাপক হারে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়। সেদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠিন নিয়ম এবং বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
জানুয়ারির শেষ দিক থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত উহানে লকডাউন জারি ছিল। প্রথম লকডাউন ঘোষণার এক বছর পর উহানে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক।
গত সপ্তাহেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক সাংবাদিক উহানে গিয়েছিলেন। তিনি স্থানীয়দের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তাদের জীবন এখন কেমন।
কারও কারও ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরটা মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছে।
হ্যান মেইমেই নামে উহানের এক বাসিন্দা বিবিসি চাইনিজ'কে বলেন, "এই মহামারি নিশ্চিতভাবে পেছনে কিছু ফেলে যাচ্ছে, যেটা হয়ত উপর থেকে নাও দেখা যেতে পারে।”
তারপরেও কেউ কেউ মনে করেন চীন এই মহামারি ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। বেইজিং এর কয়েকজন বাসিন্দা বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন।
আবার কারও কারও মতে এ পরিস্থিতি একে অপরের সঙ্গে বিরাট আকারে ঐক্য এবং যোগাযোগের ধারণা তৈরি করেছে।
লি সি নামে উহানের এক শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, "মহামারির আগে মানুষকে মনে হত কিছুটা বদমেজাজী, সব সময় ছুটছে - কিন্তু মহামারির পর তারা জীবনের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ এবং অনেক বেশি আন্তরিক হয়েছে।"
হ্যান মেইমেইও মনে করেন "এই ধরণের বিপর্যয় মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।"