X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্যামেরাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত হোক

ফজলুল বারী
২৩ জুলাই ২০১৬, ১৪:১২আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৬, ১৪:২১

ফজলুল বারী প্রধানমন্ত্রীর জন্য ক্যামেরা কেনা নিয়ে তিন কর্মকর্তার জার্মানি গমনের বিষয়টি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল! বিবিসি বাংলা এবং বাংলা ট্রিবিউন বিষয়টি নিয়ে তাদের অনলাইনে রিপোর্ট করলেও অধিকাংশ সব দেশি মিডিয়া বিষয়টি সতর্কভাবে এড়িয়ে গেছে! এ যেন অনেকটা 'কে হায় জেনেশুনে বিপদ ডেকে আনতে ভালোবাসে!'
এ নিয়ে সরকারি সংশ্লিষ্ট কারও কোনও ব্যাখ্যা না এলেও আমার এক ভাই ব্যাখ্যা করে লিখেছেন- ‘কেন এই ক্যামেরার প্রয়োজন!’ তার এই ব্যাখ্যা পড়ে মনে হয়েছে আসলে আমরা একটা ক্যামেরার মতো ফালতু বিষয়ে আটকে আছি। বিটিভি, ডিএফপি, এফডিসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে দেওয়া অথবা এসব নিয়ে নতুন চিন্তার সময় এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে তুঘলকি চলে, ক্যামেরাকাণ্ডটি তারই ফল!
বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে বাংলাদেশের বিটিভি, ডিএফপি, এফডিসি এসব প্রতিষ্ঠান এখন আর যুগোপযোগী না। জনগণের টাকায় এগুলোর একেকটি এখন জনগণের ঘাড়ের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বোঝা হয়ে বসে আছে। এগুলোর একটিও এখন আর সেভাবে জনগণের পারপাস সার্ভ করছে না। জনগণ এগুলোর একটিকেও পছন্দ করে না। এগুলো দেখেওনা, বিশ্বাসও করে না। স্বৈরাচার জিয়া-এরশাদ-খালেদার আমলের বিটিভি, ডিএফপি, এফডিসির সঙ্গে এখনকার এগুলারও বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই।
আগে মানুষের কাছে বিকল্প ছিল না বলে এগুলো দেখতো, নির্ভর করতো। এখন এগুলোর বিকল্পসমূহ এই সরকারই করে দিয়েছে। আগে এগুলোর যে মান ছিল তাও এখন নেই। রামপুরার বিটিভি ভবন, শাহবাগের বেতার ভবনের বহর, এগুলোর পেছনের জনগণের কাড়ি কাড়ি অর্থের শ্রাদ্ধের আউটকাম দেখুন আর কারোয়ান বাজারের ফ্লোরে ফ্লোরে গড়ে ওঠা বেসরকারি চ্যানেলগুলোর অবকাঠামোগত সামর্থ্য পার্থক্য দেখুন। জনগণ কোনগুলো দেখে- শোনে?

কোনগুলোকে বিশ্বাস করে? বিটিভির খবর এখন আর কেউ দেখে না বলে জনপ্রিয় বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে বাধ্য করে বিটিভির রেকর্ডকৃত খবর দেখানো হয়! কিন্তু ওই সময়ে বেশিরভাগ লোকজন টিভি বন্ধ করে দেয় অথবা অন্য চ্যানেলে চলে যায়।

ডিএফপি বহুকাল একটি চিহ্নিত দুর্নীতির আখড়া! এখান থেকে ঠিক হয় প্রতিদিন কোন পত্রিকায় কত ইঞ্চি বিজ্ঞাপন যাবে!

আপনার পণ্যের প্রচারের স্বার্থে আপনি জনপ্রিয় মিডিয়ার কাছে যাবেন। কিন্তু দুর্নীতির আখড়া ডিএফপি এর ধার ধারে না। এটি এখন সরকারি বিজ্ঞাপন সহ নানান সুযোগ সুবিধার প্রায় সবই মিডিয়ার দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন মন্ত্রী সহ দায়িত্বশীলদের ভাগের প্যাকেট যায়।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপির তথ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যে রেটে প্যাকেট পেতেন, আওয়ামী লীগের তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়ীদের একটি রেটে প্যাকেট তার বাড়িতে চলে যেতো বলে অভিযোগ আছে! এখনকার তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের না। তিনি এখন প্যাকেট পান কিনা বা কী রেটে পান সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবাদিকদের বহুল দাবির বেতনভাতার ওয়েজবোর্ডের বিষয়টিকে খেলো করে দিয়েছে এই ডিএফপির দুর্নীতি!

পড়তে পারেন: একটি ক্যামেরা কিনতে জার্মানি যাচ্ছেন সরকারের তিন কর্মকর্তা

সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার শর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু সারাদেশের হাজার হাজার পত্রিকার আট-দশটি বাদে অন্যরা ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন দেয় না বা সে সামর্থ্য তাদের নেই। কিন্তু ডিএফপির সঙ্গে দুর্নীতির লেনদেনে তারা ঠিকই সরকারি বিজ্ঞাপন পায়, নিয়ে নেয়।

ডিএফপির ফিল্ম অ্যান্ড পাবলিকেশনস বিভাগ কী করে বা কী করতে পারে ক্যামেরা কাণ্ডটি এর সর্বশেষ নমুনা।

বেশি প্রয়োজন নেই, বাংলাদেশের একশ লোকের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখুন ডিএফপি বা এটি ফিল্ম পাবলিকেশন্সের জন্য কী করছে! নিশ্চিত উত্তর হবে কেউ জানে না। অথচ বছরের পর বছর এর পেছনে জনগণের টাকা ঢালা হচ্ছে!

এরশাদ-খালেদা তাদের পাইক পেয়াদাদের জন্যে এটি যা করতো এখনও তার সঙ্গে কোনও পার্থক্য আছে কি? এসব যখন এরশাদ-বিএনপির আমলে হয়েছে তখন আওয়ামী লীগের লোকজন এসবের শক্ত প্রতিবাদ করেছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আওয়ামী ঘরানার লোকজন বেশি থাকায় তারা বরাবর পান থেকে চুন খসলে সবার আগে খবর পেতো। এখন তারাই এর সাফাই গাইছে! আল্লাহর ওয়াস্তে এসব বন্ধ করুন।

এরশাদ-খালেদার সঙ্গে শেখ হাসিনার কিছু পার্থক্য রাখুন।

এক সময়ের জমজমাট এফডিসি এখন একটি মরা বাড়ি! ডিএফপি-এফডিসি-বিটিভি এসব ক্ষমতাসীনদের অনেক অযোগ্য, তেলবাজিতে যোগ্য-দক্ষ লোকজনের পদায়ন-পুরস্কারের জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়। এসবের যোগ্যরা এখান থেকে সরকারি বেতন-ভাতা তুলে কিন্তু কাজ করে অন্য সব জায়গায়! ঠিক একই ধরনের প্রতিষ্ঠান কিন্তু পাশের দেশ ভারতেও আছে। কিন্তু সেগুলোর পেশাদারি ভূমিকা চরিত্রের খুব কম বাংলাদেশের গুলোয় আছে।

ক্যামেরাকাণ্ড যেটি হয়েছে তা আগের আমলগুলোতেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কারণ হচ্ছে সরকারি বরাদ্দ, রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র সুযোগ সুবিধার ভাগবাটোয়ারার সুযোগ কেউ ছাড়তে চান না! অথচ এই সুযোগসমূহ দেওয়া যেতো তাদেরকে জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। মিডিয়ার সে সব জায়গায় শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগের ভক্ত লোকজন কম নেই। তাদের সুযোগ দিয়ে শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগ যা যা প্রচার সুবিধা পাবে এসব পচাগলা রদ্দি মার্কা বিটিভি-ডিএফপি এদের দিয়ে তা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা বলবেন?

আজকাল অনেক কম টাকায় স্পেশাল সেল-মিডিয়া সেল এসব করা সম্ভব। সরকারের অর্থনৈতিক হচ্ছে বাজার অর্থনীতি। আর সরকার অন্ধের মতো অকার্যকর বিটিভি-ডিএফপির পেছনে টাকা ঢেলেই যাচ্ছে! ডিজিটাল সরকারের এসব অ্যানালগ চিন্তাভাবনা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রতিযোগিতা করে প্রাইভেট সেক্টর টিকে আছে। বিটিভি-ডিএফপি এগুলোর অনেক কাজকর্ম প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিন। বেসরকারি মিডিয়ার মতো এগুলোও করে খাক।

ক্যামেরাকাণ্ড নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। নতুবা এটিও কিন্তু আগামীতে একটি মামলার সৃষ্টি করবে। ইতিহাস বলে এসব মামলা হয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। আমলাদের দল-রঙ বদলে কিন্তু বেশি সময় লাগে না। অতএব সাধু সাবধান।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ