টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নীলফামারীতে ২৪ হাজার ৯শ’ ৭০টি পুকুর ডুবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের প্রায় ৮ কোটি এক লাখ ৫৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাচান ফেরদৌস সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় ২৪ হাজার ৯শ’ ৭০টি পুকুর ডুবে যায়, যার মোট আয়তন দুই হাজার দুইশ’ ৩০ হেক্টর। এতে পুকুর মালিক ও মৎস্য চাষিদের প্রায় ৮ কোটি এক লাখ ৫৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এর আগে জেলা শহরের কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, ‘৮৮ সালের বন্যাকেও হার মানিয়েছে এবারের বন্যা, এর ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি জানান, ১৮ হাজার একশ’ ৭ জন পুকুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডোমারে চার হাজার ৩৪০ জন, ডিমলায় দুই হাজার ৫শ’, জলঢাকায় চার হাজার ৮শ’ ১২ জন, কিশোরগঞ্জে একহাজার ৮শ’ ২৫ জন, সৈয়দপুরে একহাজার ৬শ’ ১০ জন ও সদরে তিন হাজার ২০ জন পুকুর মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এদিকে, পুকুর মালিক ও মৎস্যচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। মাছের পোনা কেনা, খাদ্য সরবারহ, ওষুধের পেছনে তাদের যে টাকা ব্যয় হয়েছে, এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার উপায় জানেন না তারা।
পুকুর মালিক ও মৎস্যচাষীদের মতে, এক বিঘার পুকুরে মাছ চাষে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এতে মাছের উৎপাদন হয় বিঘা প্রতি ৫০০ কেজি, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। লাভের আশায় মাছ চাষ করে এখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুড়তে হচ্ছে তাদের।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের মৎস্য চাষি আব্দুল হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক একর পুকুরে মাছের চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় একলাখ ৫০ হাজার টাকা। মাছ উঠতে প্রায় আরও দুই মাস সময় লাগবে। এর আগেই বন্যায় সব মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। অভাবে পড়েছে আমার পরিবার। ছেলেমেয়েসহ আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’
জেলা মৎস্য দফতর সূত্র জানায়, জেলার মাছের চাহিদা মেটাতে এখন ৩৯৩ দশমিক ২৬ মেট্রিক টন পোনার প্রয়োজন, এর জন্য ব্যয় হবে প্রায় চার কোটি ৯ লাখ টাকা। আর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে লাগবে ২১২২ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন, যার জন্য ব্যয় হবে ৮ কোটি ৪৯ লাখ।
মৎস্য কর্মকর্তা হাচান ফেরদৌস সরকার বলেন, ‘খাদ্য ও পোনার চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত মৎস্যচাষিদের জন্য একটা সুখবর আসবে।’