X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের সঙ্গে দেখা করা হলো না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সিজানের

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
১৩ নভেম্বর ২০১৭, ০৪:৪১আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ০৪:৪১

 

নুর আলী আহমেদ সিজান মায়ের সঙ্গে দেখা করা হলো না নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র নুর আলী আহমেদ সিজানের (২৫)। মোবাইলে মাকে জানিয়েছিলেন, কুয়াকাটার শিক্ষা সফর শেষে শনিবার বাড়ি ফিরবেন। সিজান শনিবারই বাড়ি ফিরলেন তবে জীবন্ত নয়, লাশ হয়ে।

কুয়াকাটা থেকে গত শুক্রবার পটুয়াখালির গলাচিপা উপজেলায় বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা যান সিজান। তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে নিজ বাড়ি জয়পুরহাট শহরের সবুজনগর মহল্লায়। রবিবার জেলা প্রশাসনের কালেক্টরেট মাঠে সকাল ১১টায় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। 

রবিবার সকাল ৯টায় জয়পুরহাট শহরের সবুজনগর মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, পাশেই শোকে স্তব্ধ মা নুরজাহান বেগমকে শান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী নারীরা। তিনি কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে ডুকরে উঠছেন। তার কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠছে পুরো পরিবেশ। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সিজান তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। মা নুরজাহান জেলা প্রশাসন অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। মা-বাবার সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়ায় ছোট বেলা থেকে সিজান মায়ের সান্নিধ্যে বড় হয়েছেন। নুরজাহান শহরের সবুজনগর হিন্দুপাড়া মহল্লায় নিজের বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে একাই থাকতেন। ছোট বেলা থেকে মেধাবী হওয়ায় মা নুরজাহান বেগম ছেলের পড়ালেখার প্রতি ছিলেন যত্নশীল। তাইতো শত অভাবও ছেলের পড়ালেখায় ছেদ পড়তে দেননি নুরজাহান। দাম্পত্য জীবনে নানা ঘাত প্রতিঘাতের কারণে উচ্চ শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে ছেলে সিজানকে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান তিনি। সিজান কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) এর শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত বুধবার রাতে সিজানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ বন্ধু পটুয়াখালির কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়। এতে মা নুরজাহান বাধ সাধেন কুয়াকাটা যেতে। কিন্তু কোনও বাধাই শোনেনি সিজান। ৬ বন্ধুর মধ্যে আবীর আজাদ নামের একজনের বাড়ি পটুয়াখালির গলাচিপা উপজেলা সদরে। বৃহস্পতিবার কুয়াকাটা বেড়ানো শেষ করে তারা কুয়াকাটা রেস্টহাউজে রাত্রিযাপন শেষে শুক্রবার সকালে ৬ বন্ধু মিলে গলাচিপা উপজেলা সদরে আবীরের বাড়ি যায়। সেখান থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স-এর পুকুরে ৬ বন্ধু গোসল করতে যায়। তাদের মধ্যে আবীর ও অন্য একজন বন্ধু পুকুরে নামে। কিন্তু সাঁতার না পারায় সিজানসহ আর চারজন পুকুরের ঘাটে বসে ছিলেন। সেখানে বেলা ১২টার দিকে মা নুরজাহানের সঙ্গে শেষ কথা হয় সিজানের।

মোবাইল ফোনে সিজান মাকে জানিয়ে দেয়, শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রওনা দেওয়ার কথা। এ সময় মা নুরজাহান সাবধানে থাকার কথাও বলেন ছেলেকে। উত্তরে সিজান মাকে জানায় সে ভালো আছে। শনিবার বাড়ি ফেরার কথা জানিয়ে মাকে বলেন, ১৬ নভেম্বর জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় আসার পর আর সে বাড়ি ফিরবে না। পরে গলাচিপা থানা থেকে খবর আসে দুপুরে গোসল করতে গিয়ে পা পিছলে পুকুরে পড়ে সিজান মারা গেছে।

সিজানের মামা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সিজানের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি পুকুরে ডুবে সিজান মারা গেছেন। তাদের অনুপস্থিতিতেই হাসপাতাল মর্গে সিজানের ময়না তদন্তও সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিজানের দুই ঘাড়ে রক্ত জমে থাকার মতো দাগ এবং বাম গালে আঁচড়ের চিহ্ন দেখে আমরা সন্দেহ করছি। এটা কি পুকুরে ডুবে মৃত্যু, নাকি হত্যা?’

আরও পড়ুন:
প্রধান শিক্ষকের চড়ে অসুস্থ প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী

/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নগরীতে গরমের তীব্রতা বাড়ার মূল কারণ ভুল নগরদর্শন: বাপা
নগরীতে গরমের তীব্রতা বাড়ার মূল কারণ ভুল নগরদর্শন: বাপা
ওডেসায় একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫
ওডেসায় একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫
বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ ইউজিসির
বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ ইউজিসির
‘নৌকার প্রার্থী রুহেলকে জেতানোর জন্য অনেক অপকর্ম করেছি’
‘নৌকার প্রার্থী রুহেলকে জেতানোর জন্য অনেক অপকর্ম করেছি’
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
সোনার দাম১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম