X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নগরীতে গরমের তীব্রতা বাড়ার মূল কারণ ভুল নগরদর্শন: বাপা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৩০আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৩০

দেশের নগরীগুলোতে তাপদাহ অনুভবের তীব্রতা বাড়ার অন্যতম মূল কারণ হলো ভুল নগরদর্শন। নব্বই দশকের পর নগরীগুলোতে অপরিকল্পিত, মানববিচ্ছিন্ন এবং পরিবেশের বৈরী কর্মধারার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির নগরায়ণের ধারার যে বিকাশ— আজকের এই নগরীগুলোর অভিঘাত তারই প্রকাশ। আর প্রকারান্তরে এভাবেই অর্ধবিকলাঙ্গ একটি প্রজন্ম তৈরির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে আমাদের নগর ও নগরায়ণ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী হলে ‘নগর তাপদাহের তীব্রতা: প্রেক্ষিত ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবাহিত তাপদাহের যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে, তা এদেশে নতুন নয়। ঐতিহাসিকভাবে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। ঢাকার ক্ষেত্রে, স্বাধীনতার আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল— ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৪ এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দেশের নগরীগুলোতে তাপদাহ অনুভবের এই তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হলো ভুল নগরদর্শন। নব্বই দশকের পর নগরীগুলোতে অপরিকল্পিত, মানববিচ্ছিন্ন এবং পরিবেশবৈরী কর্মধারার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির নগরায়ণের ধারার যে বিকাশ— আজকের এই নগরীগুলোর অভিঘাতগুলোর তারই প্রকাশ।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে ২০২৪ সাল। জাতিসংঘের আবহাওয়া সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে গত এক দশকে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বরাবরই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির তালিকায় অন্যতম। পাশাপাশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ‘এল নিনো’র প্রভাব, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন পরিবেশ ও আবহাওয়ার সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনে অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ দিকে থেকে আগত মৌসুমি বায়ুর দ্রুত আগমন ঘটছে। আবার অপরদিকে উত্তর দিক থেকে আগত আন্তঃদেশীয় দূষিত ও উষ্ণ বায়ুর প্রবেশ ঘটছে দেশীয় আবহাওয়ায়। এছাড়া নদীর ওপর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদী শাসন ও খনন ব্যবস্থাপনার অভাবে নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে উত্তপ্ততার পরিধি বাড়ছে, তাপমাত্রা সীমাহীন না হলেও তীব্র দাবদাহ অনুভূত হচ্ছে।

সবুজায়ন ও বনায়ন প্রেক্ষিতে ইকবাল হাবিব বলেন, বাংলাদেশে বনজ সম্পদ ও বনভূমির অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে— যা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। বাংলাদেশের বন বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবমতে, বাংলাদেশে বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজাড় হয়েছে— যা বার্ষিক বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। গত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬ বর্গকিলোমিটার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্ট ধ্বংস করা হয়েছে।

‘রাইজিং টাইডস, রোরিং ফিউচার্স: দ্য সুন্দরবনস কোয়েস্ট ফর সারভাইভাল-২০২৪’ শীর্ষক গবেষণা মতে, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ দশকে সুন্দরবনের ঘন বনাঞ্চল ২৭ ভাগ কমেছে। পাশাপাশি দেশের নগরগুলোসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে বৃক্ষশোভিত সড়কগুলোর আচ্ছাদনকে দ্রুততম সময়ে বৃক্ষহীন মরুকরণযাত্রায় মারণমুখী চেষ্টাও বিগত দিনগুলোতে দৃশ্যমান।  বায়ুমণ্ডলে মানুষের বসবাসা স্তরে ছাঁয়াঘেরা ৫ থেকে ৬ গুণ শীতল পরিবেশ বা মাইক্রোব্লাইমেটে বজায় রাখার সবুজ বৃক্ষরাজির আবরণকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।

জলাশয় ও জলাধার কমছে জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, সরকারি পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জলাশয়, খাল,  পুকুরসহ অন্যান্য জলাধার সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা না করে বরং দখলদারদের কাছে জিম্মি হওয়ার একটি মনোবৃত্তি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়েছে। নগরীর বৃক্ষরাজির পাশাপাশি জলাশয় জলধারা (নীল অন্তঃসংযোগ)-কে ক্রমাগত বিলুপ্ত হতে দেওয়া এবং এর রক্ষণ ও সংরক্ষণ (কনজারভেশন ও প্রিজারভেশন) এই দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভারসাম্যমূলক এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিত না করাই এর মূল দায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাপার সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শহীদুল ইসলাম, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

/এএজে/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
তাপপ্রবাহে বিদ্যালয়ে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
প্রচণ্ড গরমে এক স্কুলের ২২ ছাত্রী অসুস্থ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
সর্বশেষ খবর
ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত
ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৯ জন আহত
চার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ
উপজেলা নির্বাচনচার ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৭ শতাংশ
রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের তদন্ত শুরু
রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের তদন্ত শুরু
পরীর মনে ‘সুপ্তি’র মায়া
পরীর মনে ‘সুপ্তি’র মায়া
সর্বাধিক পঠিত
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পাউবোর দুই প্রকৌশলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’
‘বাংলাদেশ দলে খেলতে না পারলে আমি মরে যাবো না’