X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

কষ্ট বৃথা যায়নি কৃষক বাবার, ছেলে এখন বিসিএস ক্যাডার

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৭ মার্চ ২০১৮, ২০:১১আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৮, ২০:২২

ছেলেদের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কৃষক মো. নূর আমিনকে। নিজের সামান্য জমিতে কাজ করার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য রেলস্টেশনে পান বিক্রি করেছেন তিনি। তবু সংসার ও ছেলেদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে একসময় লেখাপড়া বন্ধ হতে বসেছিল তার ছোট ছেলের। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে জমি বন্ধক রেখেছেন। তাতেও কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না বলে বাড়ির গরু বিক্রি করেছেন।

নূর আমিনের এতো কষ্ট বৃথা যায়নি। ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তার ছোট ছেলে ফেরদৌস আলম।

নূর আমিনের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পৌর এলাকার মধ্যমপাড়া গ্রামে। শুক্রবার (১৬ মার্চ) মধ্যমপাড়া গ্রামে গিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন নূর আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছেলে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হতে যাচ্ছে, আমার সব কষ্ট সার্থক।’ ফেরদৌস আলম

কৃষক নূর আমিন জানান, নিজে পড়াশুনা করতে পারেনি। তাই ছেলেদের পড়াশোনা করাতে চেয়েছিলেন। তার দুই ছেলে, ফিরোজ আলম ও ফেরদৌস আলম। দু’জনকেই পড়াশোনা করিয়েছেন তিনি। বড় ছেলে ফিরোজ আলম স্নাতকোত্তর পাশের পর থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। আর ছোট ছেলে ফেরদৌস আলম এবার ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

নূর আমিন বলেন,‘ফেরদৌস আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার যেন টাকা-পয়সার কোনও অভাব না হয়, সেজন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। তার খরচ যোগাতে গিয়ে ঘরের গরু বেচছি, জমি বন্ধক রাখছি। অন্যের জমির সবজি কিনে তা বাজারে বিক্রি করেছি। কিন্তু তাকে কোনও কাজ করতে দেই নাই, প্রাইভেটও পড়াইতে দেই নাই।’

বিসিএস পরীক্ষায় ছেলের পাশ করার খবরে মন আনন্দে ভরে গেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কষ্ট বৃথা যায় নাই। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

ছেলেদের কাছে বিশেষ কোনও চাওয়া আছে কিনা, জানতে চাইলে নূর আমিন বলেন,‘ছেলেরা ভালো থাক, আরও ভালো করুক, এটাই চাওয়া।’

ফেরদৌস আলমের সফলতার খবরে আনন্দিত তার মা ফেরোজা বেগমও। তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্ট সার্থক হইছে। ছেলেরা ভালো থাকবে বলেই কষ্ট করছি। ছেলেদের ভালোর জন্য যে কষ্ট, সেটা আমাগো কাছে কষ্ট না; এক ধরনের আনন্দই।’

ফেরদৌস আলমের বাবা-মা

মোবাইল ফোনে কথা হয় ফেরদৌস আলমের সঙ্গে। ফেরদৌস জানান, উলিপুরের মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

নিজের সফলতায় অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন,‘এটা অবশ্যই আনন্দের। আমার বাবা-মা কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। শিক্ষা জীবনে পড়াশোনা ছাড়া আমাকে অন্য কোনও কাজ করতে দেননি, অভাব বুঝতে দেননি। এখন আমি চাইবো, আমার বাবা-মার কষ্ট লাঘব করতে।’

তবে এই সফলতাতেই থেমে যেতে চান না জানিয়ে কৃষক বাবার এই সন্তান বলেন, ‘৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা দিয়েছি এবং ৩৮তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার ইচ্ছা, প্রশাসন ক্যাডারে যাওয়া। দেখা যাক, ভাগ্যে কী আছে।’

/এমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত