রংপুর থেকে ঢাকায় এসে খবর প্রকাশের হুমকি দিয়ে একটি সুপার শপ কর্তৃপক্ষের কাছে চাঁদা চেয়েছে সাংবাদিক পরিচয়ধারী এক ব্যক্তি। তার নাম ওয়াদুদ আলী। তার বিরুদ্ধে রংপুরেও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন।
শুক্রবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটার দিকে রামপুরার বনশ্রীতে মীনা বাজারের আউটলেটে এঘটনা ঘটেছে। এসময় ওয়াদুদ আলী নিজেকে দেশের একটি খ্যাতনামা জাতীয় দৈনিকের রংপুর ব্যুরো চিফ বলে দাবি করেন এবং ভিজিটিং কার্ড দেন। তার চাঁদা চাওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও বাংলা ট্রিবিউনের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি চাঁদার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা মীনা বাজারে ছিলেন তিনি।
মীনা বাজারের প্রধান নির্বাহী শাহীন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওয়াদুদ আলী নামের ওই ব্যক্তি শুক্রবার সন্ধ্যায় মীনা বাজারে প্রবেশ করেন। কোনও কিছু কেনাকাটা না করে তিনি বাথরুমে যেতে চান। ক্রেতাদের জন্য সেখানে বাথরুমের কোনও ব্যবস্থা নেই জানালে তিনি অনুরোধ করে স্টাফদের বাথরুমে যান। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বের হয়ে এসে আউটলেটের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ধারণ করা কিছু ভিডিও স্টাফদের দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তাকে চাঁদা না দেওয়া হলে, তিনি তার পত্রিকার ব্যাক পেজে নিউজ করে দেবেন বলেও হুমকি দেন। তখন আমার সন্দেহ হয়। আমি তার সঙ্গে কথা বলি। বুঝে যাই যে, তার অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তখন তাকে আউটলেট থেকে চলে যেতে বলা হয়। এরপর তিনি বের হয়ে যান।’
শাহিন খান বলেন, ‘ওয়াদুদ আলী নামধারী ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ পর বনশ্রী এলাকার কয়েক ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। তখন তাদের সামনেই স্টাফরা ঘটনা খুলে বলেন। এরপর স্থানীয় ওই ব্যক্তিরা সাংবাদিক পরিচয়ে ওয়াদুদ আলীর চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে নিয়ে চলে যান।’
এদিকে সাংবাদিক পরিচয়ে ওই ব্যক্তি যে ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন, সেখানে থাকা নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ওয়াদুদ আলী বলেই পরিচয় দেন। একটি জাতীয় দৈনিকের রংপুরের ব্যুরো চিফ বলেও স্বীকার করেন।
বনশ্রীর মীনা বাজারে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি। তার কাছে চাঁদা চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাঁদা চাইনি।’
চাঁদা চাওয়ার ভিডিও রয়েছে তাকে জানালে তিনি বলেন, ‘সেখানে তো আমি চাঁদা চাইনি। তাদের বুঝিয়েছি।’
মীনা বাজারের স্টাফরা তার চাঁদা চাওয়ার ঘটনা কৌশলে ভিডিও ধারণ করেন। সেখানে দেখা যায়, সাংবাদিক পরিচয়ে ওয়াদুদ বলছেন, ‘দশ, বিশ, পঞ্চাশ হাজারে কিছু হবে না। আমারও যাতে স্বার্থ রক্ষা হয়, আপনাদেরও যাতে হয়। অনেক ছেলেপেলে আছে।’
তিনি র্যাবের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার নাম বলে স্টাফদের ভয়ভীতি দেখান। তার ফোনে র্যাবের অনেকেই সেখানে চলে আসবেন বলেও জানান।
মীনা বাজারের আউটলেটে তার প্রবেশ, কথা বলা ও বের হয়ে আসার দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রয়েছে।
সাধারণত ব্যুরো চিফ ও জেলা সংবাদকর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট এলাকায় কাজ করার অনুমতি পান অফিস থেকে। এভাবেই তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওয়াদুদ আলী রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও ঢাকায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাঁদাবাজির জন্যই ওই আউটলেটে প্রবেশ করেছিলেন বলে তার সহকর্মীরা মনে করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৭ সালের মার্চে প্রেসক্লাব থেকে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়। একই বছরের আগস্টে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় মোড়ে চাল বোঝাই ট্রাক আটকে তার নেতৃত্বে চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় ট্রাকের ড্রাইভার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ট্রাক ড্রাইভার আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানেও ওয়াদুদ আলীর নাম রয়েছে। পুলিশ ওই মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। ২০১৬ সালে রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি এলাকায় এক ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধরের ঘটনায় ওয়াদুদ আলীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি।