ফলন ভালো হওয়ায় বিগত একযুগে আলুর চাষ বেড়েছে মাদারীপুর জেলায়। কিন্তু এ মৌসুমে অধিকাংশ ক্ষেতের আলুই খেয়েছে পোকায়। একদিকে পোকার আক্রমণ, অন্যদিকে বাজারে দাম কমের কারণে মাথায় হাত পড়েছে গোল আলু চাষিদের।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, পাইকারি মূল্য আরও কম। পোকায় খেয়ে ফেলায় জমি থেকে আলু তোলার খরচই উঠছে না কৃষকদের।
স্থানীয় চাষিরা বলছেন, “আলুক্ষেতের এই পোকা ‘কাটুই পোকা’ নামে পরিচিত, যা দেখতে অনেকটা শুয়ো পোকার মতো। মাটির নিচে থাকা অবস্থাতেই আলু খেয়ে ফেলছে এই পোকা। তাই আলু তোলার পর হতাশ হয়ে পড়েছেন এলাকার চাষিরা।’
এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের আলুচাষি জাহেদ আলী সরদার জানান, জমি থেকে আলু তোলার পর দেখছি প্রায় সবটাই পোকায় খাওয়া। এই আলু বিক্রি তো দূরের কথা, গরুকে খাওয়ানোর উপযোগীও নয়।
বালিগ্রাম ইউনিয়নের চাষি সফেদা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশের জমিতে চাষ করে আগে অনেক আলু পেতাম। কিন্তু এবার কষ্ট করে জমি থেকে আলু তুলতে যে পরিশ্রম ও খরচ লাগছে সেই টাকাই উঠবে না। কৃষি অফিস থেকে যদি আলুতে পোকা দমনে ব্যবস্থা নিতে বলতো তাহলে আমাদের এত লস হতো না। এখন ক্ষেত পরিষ্কার করার জন্যই আলু উঠাচ্ছি।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএমএ গফুর বলেন, ‘শুয়ো পোকা, লেদা পোকার মতো দেখতে এই পোকার নাম ‘কাট ওয়ার্ম’। রাতের অন্ধকারে দ্রুত আলু কেটে গর্ত করে খেয়ে ফেলে এই্ পোকা। গোল আলুতে এই ধরনের পোকা আমাদের এলাকায় এবারই প্রথম। পোকায় ধরার বিষয়টির চিন্তা ‘মাইনর’ হিসেবে ছিল, কিন্তু বিষয়টি ‘মেজর’ হিসেবে আসবে তা আমাদের চিন্তায় ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলু আবাদের শেষদিকে এই অবস্থা হয়েছে, তাই কৃষকরা প্রস্তুত ছিলেন না। যখন কোনও এলাকায় হয় এ ধরনের পোকার আক্রমণ হয়, তখন এলাকাজুড়ে পোকার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানার পর থেকেই আমরা পোকা দমনের জন্য বালাইনাশক বা পেস্টিসাইড হিসেবে নাইট্রো বা এসিমিক্স ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি কৃষকদের।’
সরেজমিনে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার সদর ও কালকিনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিগত বছরগুলোতে আলু চাষের সাফল্যের কারণে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হন। জেলায় এই মৌসুমে ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে কারেজ, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এস্টারিক্স জাতের আলু চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদরে ১৫ হেক্টর, কালকিনিতে ৪১০ হেক্টর, রাজৈরে ১৭ হেক্টর এবং শিবচরে ১০৮ হেক্টর জমিতে আলু ফলিয়েছেন চাষিরা।